সকল মেনু

নির্বাচনের শেষ ধাপে আরও ভয়াবহ ভরাডুবি বিএনপির

up-vote_13717হটনিউজ২৪বিডি.কম : ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে শেষ ধাপের ফলাফলে বিএনপির ভরাডুবি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরাই অধিকাংশ এলকায় বিজয়ী হয়েছেন। শনিবার যে ৬৯৮টি ইউপিতে ভোট হয়েছে তার মধ্যে মধ্যরাত পর্যন্ত ৪৬৪টির ফল পাওয়া গেছে। এতে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের ৩৩৯, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ৩৫, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির ৩, জেপি-মঞ্জুর ১ এবং ৮৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এই ধাপে ২৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভোটে অনিয়মের কারণে ৩৬টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। তবে এ কারণে কয়টি ইউপির ফল স্থগিত হবে, তা জানাতে পারেনি ইসি।

দেশে প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক এ নির্বাচনের শেষ ধাপে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ ১৬টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীরা অংশ নেন। এর আগে গত ২২ মার্চ প্রথম ধাপের ৭১২টি, ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯টি, ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপে ৬১৫টি, চতুর্থ ধাপে ৭ মে ৭০৩টি, পঞ্চম ধাপে ৭১৭টি ও শেষ ধাপে গতকাল ৬৯৮টি ইউপিতে ভোট নেওয়া হয়।

এর আগের ৫ ধাপে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীরা ২ হাজার ২৬৭ ইউপিতে ও ধানের শীষের প্রার্থীরা ৩১০ ইউপিতে জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৬৯৬ জন। চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২২০ জনেরও বেশি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর বাইরে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ও রাঙামাটির কাউখালীর ফটিকছড়িতে স্বতন্ত্র ২ চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ঘটনাবহুল এ ইউপি নির্বাচনে অন্তত ১০৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং একইভাবে নির্বাচনী সংঘর্ষে কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ৬ ধাপে নবম ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এবার সর্বমোট ভোট হয়েছে ৩ হাজার ৯৬৮টি ইউপিতে। এর আগে স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম স্তর ইউপিতে নির্দলীয় নির্বাচন হতো। আর নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা এ নির্বচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছেন।

এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে সংঘাতের পাশাপাশি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ারও রেকর্ড হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আগের ৯টি ইউপি নির্বাচনের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ ২২০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তারা সবাই সরকারদলীয় প্রার্থী। এর আগে গত ১৯৮৮ সালের ইউপি নির্বাচনে ১০০ জন প্রার্থী বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া এ নির্বাচনে বিএনপি সবকটি ইউপিতে প্রার্থী দিতে পারেনি। ৫৫৪টি ইউনিয়নে বিএনপির কোনো প্রার্থী ছিলেন না।
এর আগে দেশে ৮ বার অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ছিল ১৯৮৮ সালের ইউপি নির্বাচন। ওই নির্বাচনে প্রতিবেদনভেদে ৮৫ থেকে ৯৫ জন মানুষ মারা গিয়েছিল। ওই সময় স্বৈরাচারী এইচ এম এরশাদ ছিলেন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। এছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২০০৩ সালের নির্বাচনেও ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ডেমোক্রেসিওয়াচের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫১ দিনব্যাপী ওই নির্বাচনে ৮০ জন প্রাণ হারিয়েছিল। অবশ্য কোনো কোনো প্রতিবেদনে এই সংখ্যা ৭২ বলেও উল্লেখ করা হয়।

সংঘাতপূর্ণ এ নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিশনের সিনিয়র এক কর্মকর্তারা জানন, ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে সবচেয়ে কম সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল। যদিও ওই নির্বাচনে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনভেদে ২৭ থেকে ৩৪ জন মারা গিয়েছিল বলে উল্লেখ রয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে অন্তত ১৮টি দল অংশ গ্রহণ করেছে। তবে এর মেধ্য মূল লড়াই হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে। ফেব্রুয়ারিতে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী সহিংসতায় শনিবার পর্যন্ত ১০৬ লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। ইসির হিসাবে প্রথম ধাপে ৭৪ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৭৮ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৭৬ শতাংশ, চতুর্থ ধাপে ৭৭ শতাংশ ও পঞ্চম ধাপে ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top