সকল মেনু

ছেলেকে পেয়েছি, ঝামেলা হবে না তো ?

31ff7668-3117-4991-bb5f-c8f73d5b5fccএম. শরীফ হোসাইন, ভোলা : গ্রামের শান্ত শিশু, বয়স তার ৯ কি ১০। এর বেশি কিছুতেই নয়। মামলার স্বার্থে লেখা হয়েছে তার বয়স ১৫ বছর। কিন্তু তাও আইনে কাভার দেয়নি। অবশেষে ১৬ বছর পর হাইকোর্ট থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে তাকে। শুধু কী মুক্তি? সেই সঙ্গে এতগুলো বছরের ক্ষতিপূরণ ৫০ লাখ টাকা! এতগুলো বছর জেলে কাটানোর ক্ষতিপূরণ না হয় টাকায় হল। কিন্তু বৃদ্ধ অসহায় দরিদ্র পিতা নাবালক পুত্রের মুক্তির জন্য যে ভিটেমাটি সব হারিয়ে এই পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নিলেন তার ক্ষতিপূরণ কী দিয়ে হবে? কে দিতে পারবে? এই কথাগুলোই আব্দুল জলিলের বৃদ্ধা মায়ের মনে বারবার ঘুরে ফিরে আসে।
গত মঙ্গলবার বিভিন্ন টেলিভিশনের স্ক্রলে- ভুল মামলায় ভোলার চরফ্যাশনের আব্দুল জলিলের যাবজ্জীবন সাজার রায় বাতিল, তাকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য আদালতের নির্দেশ এই সংবাদ দেখার পর খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায় ১৬ বছর আগের না জানা যত কথা।
স্থানীয়রা জানান, চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ ইউনিয়নের ফরিদাবাদ গ্রামে শশুর বাড়িতে ঘর তুলে থাকতেন আব্দুল জলিলের পিতা-মাতা হাসন আলী ও সালেকা বেগম। মাত্র ১২ শতক জমিতে একটি কুড়ে ঘর। কিন্তু বাড়ির অন্য শরিকদের লোভ ওই জমির ওপর। বিভিন্ন ভাবে প্রলোভন দেখিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
প্রতিদিন নানা ভাবে উৎপাত চলতেই থাকছে হাসেম আলী ও তার সন্তানদের ওপর। স্ত্রী ৩ ছেলে আর ৩ মেয়ের সংসার নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন দিনমজুর হাসেম আলী। এমনি অবস্থায় একদিন ওই বাড়ির মাওলানা জাফরের ৫ থেকে ৬ বছরের শিশু কন্যা পুকুর পাড়ে ছোট্ট একটি গাছে চড়ার সময় পড়ে গিয়ে ব্যথা পায়। তার চিৎকারে বাড়ির লোকজন এসে দেখে রক্তাক্ত মেয়েটি কাঁদছে। অদূরের বিলের মধ্যে হাসেম আলীর ৮ থেকে ৯ বছরের ছেলে আব্দুল জলিল ছাগলকে ঘাস খাওয়াচ্ছিল। ব্যস, জলিলের বিরুদ্ধে চরফ্যাশন থানায় মামলা করা হলো ধর্ষণের।
২০০১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর দায়ের হওয়া মামলায় নভেম্বরের কোনো একদিন পুলিশ তাকে ধরে জেলে পুরিয়ে। এরপরের ইতিহাস আরো করুণ। নাবালক ছেলেকে ছাড়াতে গিয়ে শশুর বাড়ির তরফ থেকে পাওয়া ওই ১২ শতাংশ জমি মাত্র ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়। ভিটেমাটি হারিয়ে আশ্রয় বাকি সন্তানদের নিয়ে চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ ইউনিয়নের ফরিদাবাদ গ্রামের কেওড়া খাল পাড়ের খাস জমিতে। কোর্ট কাচারি আর থানা পুলিশের সব ঝামেলা চুকিয়ে ২০১৪ সালে পরপারে চলে যান জলিলের বাবা হাসেম আলী। এই যন্ত্রণা থেকে বাবা ঠিক মুক্তি পেলেন, কিন্তু তার ছেলে জলিলের তো মুক্তি মেলেনি। তবে মুক্তি ঠিকই মিলেছে কিন্তু সময় বড্ডো বেশি দেরি হয়ে গেছে।
এসব তথ্য নেয়ার সময় এই প্রতিবেদককে অনেকেই প্রশ্ন করেন। মামলা করলো জাফর, আর খবর চালালো থানা পুলিশ আর উকিল মোক্তার। একলা সরকার জরিমানা দিবে কেন, আইন কী তারা জানেন না ? ভুল আইনে কেন মামলা করা হল চার্জশিট দেয়া হল ? যারা এগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের এর জন্য মাসুল গুণতে হবে না কেন ? এ প্রশ্নের জবাব কেবল এই প্রতিবেদক নয়; হয়তো কারো কাছেই নেই।
যার মনের নানান প্রশ্ন দিয়ে এই প্রতিবেদন শুরু হয়েছিল। আবার তার কাছেই ফিরে যাই। তিনি সালেকা বেগম। তার এখন একটাই প্রশ্ন আমার ছেলেকে তো ফিরে পেয়েছি। আবার কোনো ঝামেলা হবে না তো ? শিক্ষিত লেখাপড়া জানা প্রতিপক্ষ। তাদের হাত তো অনেক লম্বা। টাকার জোরে সবাইকে কিনে নিতে পারে। সালেকা বেগমের মন দিন রাত এখন এই দুশ্চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কে তাকে নিশ্চয়তা দিবে যে, তার ছেলের আর কোন ভয় নেই। ১৬ বছর পর হলেও সে ন্যায় বিচার পেয়েছে। দেশে এখনো ন্যায় বিচার আছে। এটাই যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top