ইকবাল হোসেন, রংপুর অফিস:প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা পাড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। নদী কূলবর্তী ২৫ গ্রাম তলিয়ে যাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। বিশেষ করে চরাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গত কয়েকদিন থেকে প্রবল বর্ষণসহ মঙ্গলবার রাতে উজান থেকে আসা ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতে নোহালী ইউনিয়নের নোহালী ফোটামারী, চর নোহালী, বাগডোহরা, মিনার বাজার, চর বাগডোহরা ও নোহালী সাপমারী এলাকায় ২ হাজার ৫০০ পরিবার, কোলকোন্দ ইউনিয়নের ঢাকের চর, চিলাখাল, উত্তর চিলাখাল, মটুকপুর, ও বিনবিনা মাঝের চর, সাউদপাড়া ও বাবুরটারী বাঁধেরপাড় এলাকায় এক হাজার ২০০ পরিবার, গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের ধামুর ও গান্নারপাড় এলাকায় ২০০ পরিবার, লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের শংকরদহ, পূর্ব ইচলী ও জয়রামওঝা এলাকায় ৫০০ পরিবার, গজঘন্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, জয়দেব ও কালির চর এলাকায় ২০০ পরিবার এবং মর্নেয়া ইউনিয়নের আলাল, তালপট্রি চর নিলারপাড়া ও ভাঙ্গাগড়া এলাকায় ৪০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গতকাল বুধবার বন্যা কবলিত এলাকা গিয়ে দেখা যায়, চরের বাড়িগুলোর চারপাশে শুধু পানি আর পানি। বাঁধ ছুঁই ছুঁই করছে তিস্তার পানি। ভাঙন দেখা দিয়েছে লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের বিজয় বাঁধে। যে কোন মুহুর্তে এই বাঁধ ভেঙে ব্যাপক এলাকা পাবিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পাশের বাড়িসহ হাট-বাজারে যেতে কলার ভেলাই একমাত্র ভরসা চরের মানুষের। ঘরে হাটু কিংবা কোমর পানি ওঠায় গতকাল চুলা জ্বালাতে পারেনি চরের পরিবারগুলো। সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে নৌকায় অবস্থান করছেন কেউ কেউ। গান্নারপার এলাকার শহর বানুর ঘরে কোমর পানি বিরাজ করছে। তিনি বলেন, ‘চুলা ধরবার (জ্বালানোর) উপায় নাই। জয়রামওঝা চরের ওছমান আলী বলেন, ‘সকালে পানির স্রোতে দুইটা গরু ভাসি গেইছে। তখন থাকি হামরা ভয়ে আছি।’ পূর্ব ইচলী গ্রামের হাসান আলী ও জোবেদা বেগম বলেন, ‘হঠাৎ বান (বন্যা) আসায় বাড়িত কোমর পানি হইছে।
লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফয়সাল হাসান জানান, ‘এটাই এ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। বাড়ি ছেড়ে বন্যা কবলিত লোকজন তিস্তা বাঁধ কিংবা উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বন্যাকবলিত তিস্তার চরাঞ্চলে ত্রান সামগ্রী পাঠানো দরকার।’
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্ট বন্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উজানে ভারত তাদের ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়ায় নদীতে পানি বেড়েছে। বন্যা সতর্কীকরন কেন্দ্রের বরাত দিযে তিনি জানান, নদীর পানি আরো বাড়তে পারে। এদিকে বন্যা কবলিত পরিবারগুলোর জন্য বরাদ্দ চেয়ে জরুরি ফ্যাক্সবার্তা পাঠানো হয়েছে বলে জানান গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু জাফর।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।