সকল মেনু

বন্ধ হলো যশোরের গ্রামীণ শিল্প মেলার ‘লটারি জুয়া’

৭নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ১৭ মে:  অবশেষে যশোরের বহুল বিতর্কিত ও নিন্দিত ‘লটারি জুয়া’ বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। টাউন হল মাঠে গত ২৮ এপ্রিল থেকে মাসব্যাপী গ্রামীণ শিল্প মেলায় প্রবেশ টিকেটের নামে বিক্রি হচ্ছিল এ লটারি জুয়ার টিকেট।

সারাদিন শতাধিক গাড়ির বহর ও অন্তত ৩০টি স্পটে অবৈধ এ লটারির টিকেট কাউন্টার খুলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। প্রেসক্লাব যশোরের আয়োজনে এমন কারবারে চারিদিকে নিন্দার ঝড় উঠে। লটারির নামে এই জুয়া বন্ধের দাবিতে যশোরের ৭টি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেন।

জেলা প্রশাসক যশোরে না থাকায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ সোহেল হাসান এই স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। এসময় মঙ্গলবার থেকে মেলায় জুয়া বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন এডিএম।

শহরের ধর্মতলা এলাকার গৃহবধূ আয়েশা বেগম, খড়কির হাজামপাড়ার মরিয়ম বেগম, এমএম কলেজের ছাত্র দেলোয়ার হোসেনসহ অনেকে জানান, কথিত ওই মেলায় ‘বস্তাপচা’ মালামাল বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। তাদের দাবি মেলায় পণ্য নয়, মূল আকর্ষণ লটারি জুয়া।

এই লটারির টিকেট বিক্রি করতে প্রতিদিন সকাল থেকে টাউন হল মাঠ থেকে ১০০টির বেশি ইজিবাইক, কার, মাইক্রোবাস ও পিকআপ ভ্যান ছুটে চলে জেলা সদরসহ আশপাশের এলাকায়। মাইকে লোভনীয় পুরস্কারের কথা বলে বিক্রি করা হয় টিকেট। এছাড়া শহরের বিভিন্নস্থানে অন্তত ৩০টি স্পটে টেবিল বসিয়ে বিক্রি করা হয় টিকেট। রাতে সব টিকেট এক জায়গায় করে ড্র নামক জুয়া চলে আসছিল।

মেলার সাথে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছে প্রতিদিন এক লাখের বেশি টিকেট বিক্রি হয়েছে। টিকেটের মূল্য ২০ টাকা হিসেবে দৈনিক আয় হয় ২০ লাখ টাকারও বেশি। এভাবে গত ১৭ দিনে তিন কোটি টাকারও বেশি আয় করেছে সংশ্লিষ্টরা। আর এই টাকার ভাগ পাবে বিভিন্ন মহল। সূত্র মতে, জেলা প্রশাসনের অফিসার্স ক্লাবের তহবিলে ৫ লাখ টাকা, পুলিশ ক্লাবেও অনুরূপ টাকা দিতে হবে।

এদিকে এই লটারির নামে এমন জুয়া বন্ধের দাবিতে গত শনিবার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠান সাতটি বাম রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। আর সর্বশেষ সোমবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা যৌথভাবে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপি দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন যশোর  জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, জেলা জাসদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি ইকবাল কবির জাহিদ, কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সভাপতি আবুল হোসেন প্রমুখ।

স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, গ্রামীণ শিল্পমেলার নামে লটারির মাধ্যমে গরিব মানুষের পকেট তসরুপ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে গ্রাম-শহরে গরিব ও সাধারণ মানুষের অর্থ লুট করা হচ্ছে। এর ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা মারাত্মক রূপ লাভ করেছে, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এ খেলা থেকে একটি চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সিটি ক্যাবলে বেআইনিভাবে প্রচার প্রোপাগান্ডা টাকা লোপাটের অন্যতম বাহন হিসাবে কাজ করছে। প্রশাসনের রহস্যজনক ভূমিকা যশোরের মানুষকে পরছ- বিক্ষুব্ধ করেছে।

এ প্রসঙ্গে  যশোরের জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ সোহেল হাসান জানান, ‘সোমবার দুপুর দেড়টা থেকে আমরা লটারি বন্ধ করার জন্য প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতিকে নির্দেশ দিয়েছি। তিনি তা মেনে নিয়েছেন। তবে দুপুর পর্যন্ত যে টিকেট বিক্রি হয়েছে, রাতে শুধুমাত্র সেইসব টিকেটের ওপর ড্র অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার থেকে শুধুমাত্র মেলা চলবে কোনো লটারি চলবে না।’

এদিকে মেলার লিজ গ্রহীতা এক ব্যক্তির বাড়িতে টাকার পাহাড় জমে উঠেছে বলে জানা গেছে। পোস্ট অফিস পাড়ার ওই এলাকার একজন বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন রাতে বস্তা বস্তা টাকা তোলা হয় বাড়িটিতে। কিন্তু টাকার উৎসের বৈধতা না থাকায় ব্যাংকে জমা করতে পারছেন না। এসব টাকা গোনা হয় টিকেট বিক্রি শেষে প্রতিদিন রাতে। সারারাত টাকা গোনার জন্য ১৫-২০ জন কর্মীকেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top