সকল মেনু

উচ্চ শিক্ষা লাভ নিয়ে শংকায় অভিভাবকেরা

3d702bde-5f4b-4de7-aae7-6b5e225daaf0রাইসুল ইসলাম, পার্বতীপুর,দিনাজপুর: এবারের এসএসএসি পরীক্ষায় সারাদেশে যে সব পরিবারের সন্তানেরা জিপিএ-৫ পেয়েছে, তাদের অভিভাবকদের আনন্দ উচ্ছাসের শেষ নেই। তবে পার্বতীপুরের বাবুপাড়া হরিজন পল্লীর সুফিয়া রানী বাসফোঁরের (৪৫) খুশির তুলনায় তা নেহায়েতই তুচ্ছ। কারণ তার ছেলে আলাল বাসফোঁর (১৭) এবছর জিপিএ-৪.৩৬ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছে। এনিয়ে মায়ের খুশির অন্ত নেই। সুফিয়া রানী বাসফোঁর জানান, তার বংশে এর আগে কেউ এসএসসি’র গন্ডি পেরুতে পারেনি। তিনি বলেন, আমার কোন স্বপ্ন নেই। তার ইচ্ছে ছেলের স্বপ্ন পূরণ, যতদুর চায় সে পড়–ক, মানুষের মত মানুষ হোক, সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক। আমার ছেলের লেখাপড়া শেখার কাজে সহায়তা করার জন্য গ্রাম বিকাশকে হাজার সালাম জানাই। তবে বেশীর ভাগ অভিভাবকই তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা লাভ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী শহরের সুজাপুর মহল্লার নয়ন বাসফোঁরের মা মুন্নী রানী বাসফোঁর বলেন, এবারে যে ১২জন হরিজন ছাত্র এসএসসি পাশ করেছে তাদের অভিভাবকেরা প্রায় সবাই পরিচ্ছনতা কর্মী হিসেবে কাজ করেন। আমাদের আয় সামান্য, যা দিয়ে আমাদের সংসার চালানোর কঠিন হয়ে যায়। সারা বছর ধার দেনা করতে হয়। গ্রাম বিকাশ বা অন্য কেউ সাহায্য সহায়তা না করলে আমাদের সন্তানদের কোন ভাবে আর পড়ানো সম্ভব হবেনা।
তবে শুধু আলাল নয়, তার আরো ১১ পশ্চাৎপদ হরিজন সহপাঠী এবছর এসএসসি পাশের মুখ দেখেছে। এরা হলেন- নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার সোনাখুলি ঋষিপাড়ার তাজেল ঋষি জিপিএ-৩.৮৩, জয়দেব ঋষি জিপিএ-৩.৮৩, উলাল ঋষি জিপিএ-৩.০০ ও সৈয়দপুর পৌর সভার সুরকি মহল্লার সঞ্জয় বাসফোঁর জিপিএ-৪.১৪, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার সুজাপুরের নয়ন বাসফোঁর জিপিএ-৪.১৭ ও রকি কুমার বাসফোঁর জিপিএ-৪.৪৩। এছাড়াও পার্বতীপুর শহরের বাবুপাড়া হরিজন পল্লীর শিবা বাসফোঁর জিপিএ-৪.৫৭, অজয় বাসফোঁর জিপিএ-৪.৩২, রবিলাল বাসফোঁর জিপিএ-৪.৫০, সোহাগ কুমার বাসফোঁর জিপিএ-৪.২৯ ও সঞ্জিত কুমার বাসফোঁর জিপিএ-৪.৩৯। এদের সকলের সাথে আলাদা আলাদা ভাবে কথা হয়। তাদের মধ্যে ৫ জন চায় প্রকৌশলী হতে। অন্যরা সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা, বিসিএস কর্মকর্তা, ও শিক্ষক হতে চান।
এসএসসি উত্তীর্ণ ১২ হরিজন সহপাঠীর ৮ জন পার্বতীপুর সরকারী কারিগরী স্কুল ও কলেজ এবং ৪ জন পার্বতীপুরের হলদীবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতন থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে। তবে তারা সকলেই স্থানীয় একটি বেসরকারী সংস্থা গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রে’র আলো প্রকল্প (এক্সিলারেটিং লাইভলিহুড অফসনস্ ফর দা দলিত এন্ড এথনিক কমিউনিটি) কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত “হলিষ্টিক অপরচুনিটিস ফর মেরিটরিয়াস স্টুডেন্ট এডুকেশন (হোম) এর আবাসিক সদস্য। ৪র্থ শ্রেণী থেকে তারা এখানে লেখাপড়া শিখছে। তাদের পোশাক পরিচ্ছদ, খাবার, শিক্ষা ও চিকিৎসা সব কিছুর ব্যয়ভার নির্বাহ করে এ প্রতিষ্ঠানটি।
“হলিষ্টিক অপরচুনিটিস ফর মেরিটরিয়াস স্টুডেন্ট এডুকেশন (হোম) এর সুপারিন্টেন্ডেন্ট দিলীপ হালদার বলেন, শিক্ষা লাভের মাধ্যমে নিজেদের পেশা ও সামাজিক মর্যাদা সম্পর্কে পূর্ব পুরুষের প্রচলিত ধ্যান ধারনা ঝেড়ে ফেলে সমাজের মুল স্রোতধারায় সামিল করার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধ সৃষ্টি এই কার্যক্রমের লক্ষ্য। তিনি জানান, এ কার্যক্রমের আওতায় বর্তমানে আমাদের হোমে পশ্চাৎপদ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ২৯ জন বালক ও ২৩ জন বালিকা আবাসিক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। ২০০৯ সালে হেকস ইপার-সুইজারল্যান্ডের আর্থিক সহযোগিতায় বেসরকারী সংস্থাটি এ কার্যক্রম শুরু করে। আমাদের প্রকল্পের প্রাথমিক লক্ষ্য এসএসসি পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান। তবে তারা আগ্রহী হলে উচ্চ শিক্ষা লাভে তাদেরকে সহযোগিতা করার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিবেচনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top