সকল মেনু

জালে নেই ইলিশ, হতাশ ভোলার জেলেরা

a10920d1-bafb-4964-943d-6d13507ad293 এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ। দুই মাস পর নদীতে জাল, নৌকা, ট্রলার ও মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে নেমে পড়েছে ভোলার জেলেরা। ইলিশ শিকারের নেশায় মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর এ পার ওপার দিন-রাত চোষে বেড়াচ্ছে জেলেরা। এত কষ্টের পরও দেখা মিলছেনা ইলিশের। তাই হতাশ হয়ে পরেছে জেলেরা।
একদিকে, দীর্ঘ দুই মাস বেকার থাকায় মহাজন, আড়ৎদারের মোটা অংকের দাদনের টাকা ও ধার-দেনা করা টাকা এবং এনজিওর ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করার টেনশন অন্যদিকে, পরিবারের সবার মুখে খাবার তুলে দেওয়ার টেনশন। সব মিলে চরম হতাশের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে ভোলার জেলেরা।
এদিকে, গত ১ মে থেকে ৯ ই মে দুপুর পর্যন্ত ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে প্রযাপ্ত ইলিশ না পড়ায় মৎস্য ঘাটগুলোতে হাহাকার বইছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নেই সমাগম। জমে উঠছেনা মৎস্যঘাট। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার আসলেও ইলিশ না ধরা পড়ায় খালিহাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের। হতাশায় রয়েছে আড়ৎদার ও মহাজনরাও।
সরজমিন ঘুরে জেলেদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ভোলা সদরের ইলিশা বিশ্বরোড, চডার মাথা, ভোলার খাল, রামদাসপুর, দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর, চৌকিঘাটা, বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাকিমুদ্দিন, মির্জাকালু, তজুমদ্দিন উপজেলার সুইজঘাট, চৌমুহনি, চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া, সামরাজ, কচ্চপিয়া, কুকরী-মুকরী ও মনপুরা উপজেলার রামরাজ, ঢালচরসহ বেশ কিছু ঘাটের জেলেরা মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে সারাদিন জাল বেয়ে কাঙ্খিত পরিমান ইলিশ পাচ্ছেনা জেলেরা। এতে একদিকে যেমন কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন জেলেরা, অন্যদিকে লোকসানের মুখে রয়েছে জেলে ও আড়ৎদাররা।
ভোলা সদরের ইলিশা বিশ্বরোডের জেলে রিয়াজ উদ্দিন, ফিরোজ মাঝি, দুলাল মাঝি জানান, ১ তারিখ থেকে নদীতে মাছ ধরতে নামছি। প্রতিদিনই আমাগো সাড়ে ৭ হাজার টাকা খচর হয়। কিন্তু সারাদিন-রাত্রি জাল বাইয়া মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার ইলিশ মাছ পাই। এতে অনেক লোকসান হইতাছে আমাগো।
রামদাসপুর এলাকার জেলে ফরহাদ মাঝি, লিটন মাঝি ও সেন্টু মাঝি জানান, নিষেধাজ্ঞার পর নদীতে ইলিশ ধরতে যাইয়া গত কয়েকদিনে অনেক লোকসান হইছে। এমনেতেই তো আগের দেনায় জরজরিত তার উপর আবার নতুন কইরা আবারও দেনায় পরছি।
ইলিশা ঘাটের আড়ৎদার ফিরোজ, মনির হাওলাদার জানান, জেলেরা প্রতিদিন নদীতে গিয়ে প্রযাপ্ত মাছ না পাওয়ায় অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের ও জেলেদেরও। মাছ না পাওয়ায় ঘাটে পাইকার আসেনা। দুই একজন আসলে খালিহাতে ফিরতে হচ্ছে। ঘাটও এখনো জমে উঠেনি।
দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ঘাটের আড়ৎদার আলি মিয়া ও মহাজন মিজান জানান, নিষেধাজ্ঞার দীর্ঘ ২ মাস অনেক লোকসান গুনেছি। কিন্তু এখন নদীতে মাছ না পাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: রেজাউল করিম জানান, এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না যাওয়ায় নদীতে ইলিশ মাছ কম পাওয়া যায়। তবে, সামনে বৃষ্টিপাত হলে প্রচুর ইলিশ ধরা পরবে।

তিনি আরো জানান, আগে যেখানে একটি নিদিষ্ট সময় ইলিশ ডিম ছাড়তে এখন কিন্তু সারা বছরই কিছু না কিছু মাছ ডিম ছাড়ছে, আবার সারা মৌসূমে ইলিশ পাওয়া যায়। তবে আগামী এক সপ্তাহ কিংবা ১০ দিনের মধ্যে ইলিশ না পাওয়া গেলে বুঝতে হবে জলবায়ুগত সমস্যা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top