সকল মেনু

পাহাড়ে ৪ ব্রিগেড ছাড়া বাকি সব সেনাক্যাম্প পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার

৫০নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ৯ মে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। ইতিমধ্যে জিডিপি ৭ শতাংশ অতিক্রম করেছে। সবাই যার যার অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে জাতির পিতার আজন্ম লালিত স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে সক্ষম হব ইনশাল্লাহ। রোববার সকালে রাজধানীর বেইলী রোডে অফিসার্স ক্লাবের পার্শ্ববর্তী স্থানে নির্দিষ্ট দুই একর জমির ওপর পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণের ভিত্তিফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আরো বলেন, কেবলমাত্র ভূমি সংস্কার ব্যতীত পার্বত্য শান্তিচুক্তির অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী চারটি ব্রিগেড ব্যতীত অধিকাংশ সেনা ক্যাম্পও সরিয়ে নেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র চারটি জায়গায় চারটি ব্রিগেড থাকবে। বাকি যা সামান্য কিছু আছে পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেয়া হবে। যেজন্য রামুতে একটা সেনানিবাস স্থাপন করা হয়েছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়নে সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ভূমি সংস্কারের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন একাধিকবার গঠন করলেও কমিশনের কাজ সন্তোষজনকভাবে এগোয়নি। কারণ, সেখানে কিছুটা অবিশ্বাস ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করছিল। তবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম আইন-২০০১ এর কতিপয় সংশোধনীর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে পর্যালোচনা চলছে এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে সম্ভব সবকিছু করতেই সরকার প্রস্তুত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে এক সময় সংঘাত ছিল। পাহাড়ি অঞ্চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সেই সংঘাত বন্ধে শান্তিচুক্তি করে। যদিও শান্তিচুক্তি এতো সহজ ছিল না। শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারা আমরা বাস্তবায়ন করেছি। অথচ বিএনপি সেই শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করেছিল। তারা হরতাল পর্যন্ত ডেকেছিল। বিএনপি নেত্রী সে সময় বলেছিলেন, এই চুক্তি হলে নাকি ফেনী থেকে পুরো পার্বত্যাঞ্চল ভারতের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরাও বাংলাদেশের নাগরিক। সুতরাং সরকার ঐ অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুত্ খাত এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের সকল জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতের সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যেই আমরা শান্তি চুক্তি করি। যে চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে সৃষ্ট দু’দশকের বেশি সময় ধরে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর অনেক সরকারি দপ্তর পার্বত্য এলাকায় স্থাপিত হয়েছে, বেড়েছে কাজের সুযোগ। পার্বত্যবাসীর জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। ঢাকা ও অন্যান্য শহরে পার্বত্যবাসীর যাতায়াত বেড়েছে। ঢাকায় অবস্থানের জন্য এতদিন তাদের নিজস্ব কোনো ভবন ছিল না। রাজধানীতে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর জন্য একটি ঠিকানা করে দেয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স’ নির্মাণের জন্য বেইলী রোডে দুই একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। এ কমপ্লেক্সে এসে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ যেন বুঝতে পারে, এটাই তাদের এলাকা। সেভাবেই এই কমপ্লেক্স করা হচ্ছে উল্লেখ করে কমপ্লেক্সটির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণপূর্ত মন্ত্রীর প্রতিও তিনি তাগিদ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১ হাজার ৩৬৯ কিলোমিটার রাস্তা হচ্ছে। তিন পার্বত্য জেলায় ৮৭৩ কিলোমিটার বিদ্যুত্ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুত্ পৌঁছানোর জন্য ৮৭৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পাহাড়ী জনগণের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে রাঙ্গামাটিতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি।

এ অঞ্চলের জন্য পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল থেকে এএসআই পদমর্যাদার চাকরিতে ৫০ ভাগ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কোটা সংরক্ষণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে তাকেও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা প্রমুখ।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top