সকল মেনু

পঁচিশে বৈশাখ চির নূতনেরে দিল ডাক

Rabindranath1462675281 আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্ম তার। জন্মের এতবছর পরেও তিনি বাঙ্গালীর জীবনে প্রবাদের মত আছেন। তিনি চির নতুনের কবি, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কবি । জন্মদিন মানে নতুনের আবাহন। এটাই ভাবতেন আমাদের বিশ্বসেরা কবি রবীন্দ্রনাথ। তাই নিজের জন্মদিনে নিজেই লিখে গেছেন- উদয় দিগন্তে ওই শুভ্র শঙ্খ বাজে মোর চিত্ত-মাঝে, চির নূতনেরে দিল ডাক, পঁচিশে বৈশাখ।

বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর সাহিত্য। ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। বাঙালীর জাতিসত্তা মহিমান্বিত ও গৌরবান্বিত যার লেখা, দর্শন ও চিন্তাচেতনায় ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজ কর্মের মাধ্যমে নতুন একটি কালের সূচনা করে গেছেন। কৈশোর পেরোনোর আগেই বাংলা সাহিত্যের দিগন্ত বদলে দিতে শুরু করেন। তার পরিণত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিণত হয়েছে বাঙালীর শিল্প-সাহিত্য। তিনি উপহার দেন ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসঙ্কলন। তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, আধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, রোমান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব ভাষা ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা। রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাও কাব্যিক। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন।

সাহিত্যের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের গান বাংলা সঙ্গীত ভান্ডারকে দারুনভাবে সমৃদ্ধ করেছে। এর আবেদন কোন দিনও ফুরোবার নয়। যত দিন যাচ্ছে ততই রবীন্দ্রসঙ্গীতের বাণী ও সুরের ইন্দ্রজালে নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছে বাঙালী। তাদের আবেগ-অনুভূতি কবিগুরুর গানের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। বহু প্রতিভার অধিকার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায় সত্তর বছর বয়সে নিয়মিত ছবি আঁকা শুরু করেন। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে অঙ্কিত তাঁর স্কেচ ও ছবির সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি।

রবীন্দ্রনাথ একাধারে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বমানে উন্নীত করার পাশাপাশি জাতির চিন্তা জগতে আধুনিকতার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। বাঙালীর মানস গঠনে পালন করেছেন অগ্রদূতের ভূমিকা। সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে অভিসারী হয়ে ওঠার প্রেরণা যোগানোর মধ্যদিয়ে বাঙালী মননকে বিশ্বমানে উন্নীত করে জাতিকে আবদ্ধ করে গেছেন চিরকৃতজ্ঞতায়। দেড়শত বছর পেরিয়েও কবি আমাদের মাঝে তাই চিরজাগরূক হয়ে আছেন।

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নানা কারণে বাংলাদেশের এক হার্দিক যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছিল। কবির গান-কবিতা, বাণী এই অঞ্চলের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তির ক্ষেত্রে প্রভূত সাহস যোগায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে শুধু নয়, চিরকালই কবির রচনাসমূহ প্রাণের সঞ্চার করে। কবির লেখা গান ‘আমার সোনার বাংলা/আমি তোমায় ভালোবাসি’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় কবির বিভিন্ন রচনা স্বাধীনতা অর্জনে বিপুল প্রেরণা যুগিয়েছিল। এ জাতির সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সঙ্গীত, নাটক, চলচ্চিত্র, কথাসাহিত্য, কৃষি, সমাজ ব্যবস্থা, রাজনীতি ও জাতীয়তাবাদের জাগরণে পথিকৃতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ। আজও যার স্পন্দন প্রবহমান।

প্রতিবছরের মত নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নোবেল বিজয়ী এই বাঙ্গালি কবিকে স্মরণ করবে তার অগুনিত ভক্তরা। শুধু দুই বাংলার বাঙালীই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলা ভাষাভাষী কবির জন্মবার্ষিকীর দিবসটি পালন করবে হৃদয় উৎসারিত আবেগ ও শ্রদ্ধায়। বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

জাতীয় পর্যায়ে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। ঢাকাসহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিবসটি যথাযোগ্যভাবে উদযাপন করা হবে। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনও বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

জাতীয় পর্যায়ে কবির ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব বেগম আকতারী মমতাজ । স্মারক বক্তৃতা করবেন অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা । আজ বিকাল তিনটায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকাস্থ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

রবীন্দ্রনাথ এবং তার সহধর্মিনী মৃনালিনী দেবীর স্মৃতি বিজড়িত খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিনডিহিস্থ ‘রবীন্দ্র কমপ্লেক্স’ এ খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তিনদিনব্যাপি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এতে রয়েছে প্রতিদিন লোকমেলা ও সাংস্কৃতিক আনুষ্ঠান সহ আলোচনা সভা । আজ বিকাল চারটায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম।

কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, নওঁগার পতিসরেও কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে ।

জন্মের ১৫৫ বছর পেরিয়ে এবং মৃত্যুর প্রায় ৭৫ বছর পরেও রবীন্দ্রনাথ এখনও কেন প্রাসঙ্গিক-এ ব্যাপারে রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বাঙালীর এই কবি এমন এক সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন যখন রাষ্ট্র ছিল পরাধীন, চিন্তা ছিল প্রথাগত ও অনগ্রসর, বাংলাভাষা ছিল অপরিণত।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ একাধারে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বমানে উন্নীত করার পাশাপাশি জাতির চিন্তা জগতে আধুনিকতার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। বাঙালীর মানস গঠনে পালন করেছেন অগ্রদূতের ভূমিকা। সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে অভিসারী হয়ে ওঠার প্রেরণা যোগানোর মধ্যদিয়ে বাঙালী মননকে বিশ্বমানে উন্নীত করে জাতিকে আবদ্ধ করে গেছেন চিরকৃতজ্ঞতায়।একশত পঞ্চান্ন বছর পেরিয়েও কবি আমাদের মাঝে তাই চিরজাগরূক হয়ে আছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top