সকল মেনু

মোর খবর প্রধান মন্ত্রীকে জানাইয়া দেন

kalapara-01 (10-07-13)নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া:বয়োবৃদ্ধ সোনা গাজী এখন আর জীবিকার চাকা ঘোরাতে পারেন না। মুক্তযুদ্ধকালীন সুন্দরবন অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সরবরাহ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নৌকায় করে পার করেছেন। কখনও জীবন-যৌবনকে বাজী রেখে খাবার সরবরাহ করেছেন। খবরা-খবর সরবরাহ করেছেন। কয়েকবার পাক সেনাদের হাতে ধরাও পড়েছেন। বেচে গেছেন নৌকার মাঝি থাকার সুবাধে। জাতির জনকের সঙ্গে দেখা করছেন। তার কথায় আবেগপ্রবণ হয়ে উজ্জীবিত হয়েই মুক্তিযুদ্ধকালীন সুন্দরবন অঞ্চলে দেশ স্বাধীনের পক্ষে জীবনবাজী রেখে কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে বাড়ি পিরোজপুর থেকে পালিয়ে এসে আস্তানা গাড়েন ধুলাসার ইউনিয়নের নতুনপাড়া গ্রামে বেড়িবাঁধের বাইরে। সেখানেই পার করে চলছেন পড়ন্ত বেলার দিনগুলো। ছোট্ট একটি মুদি দোকান করছেন। সঙ্গে সহায়তা করেন সহধর্মীনী বৃদ্ধা শহরবানু। ৮০ বছরের এই দম্পতি জঙ্গলের এক একর পতিত জমি সাফ করে অর্ধেকটা আবাদি করেছেন। বহুবার, বহুবছর দেনদরবার করেছেন ভূমিহীন হিসাবে বন্দোবস্ত পাওয়ার। কিন্তু ভাগ্যে জোটেনি। তার ভাষায়, ‘টাহা চালাইতে পারি নাই’। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় বহু ভুয়া লোকজন নাম ঢুকিয়ে সরকারি ভাতা পাচ্ছেন। অথচ নিজেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন সোনা গাজী। বহুবার, শতবার ঘুরেছেন অসহায় মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তার নামটি তালিকায় অন্তর্ভূক্তির জন্য। কিন্তু পারেন নি। বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি হেলনের ভাষনকে তার কাছে এখনও নির্দেশনা মনে হয়। চোখের সামনে বহু মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি করে মেরে ফেলতে দেখেছেন। মোড়লগঞ্জর চিংড়াখালী ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামে বাড়ি ছিল এই মানুষটির। জীবন সায়াহ্নে এসে তার আকুতি অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় চোখের আলো আস্তে আস্তে নিভে যাচ্ছে। মাত্র এক শ’ টাকার ভিজিটসহ চশমা কেনার অর্থ পর্যন্ত নেই তার। ক্রমশ অচল হয়ে যাচ্ছেন এই দম্পতি। হারিয়ে ফেলছেন জীবিকা চালনার শক্তি। মুক্তিযুদ্ধকালীন সুন্দরবন অঞ্চলের সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিনের (অবঃ) একটি সুপারিশ করা আবেদন নিয়ে এই অশীতিপর অসহায় বৃদ্ধ মানুষটি বেচে থাকার সহায়তার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সুপারিশ রয়েছে সাবেক পরিচালক, মুক্তিযোদ্ধা নিয়োগকেন্দ্র, হাসনাবাদ, পশ্চিমবঙ্গের আমজাদ হোসেন গাজীর। মঙ্গলবার দুপুরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তার অসহায়ত্বের কথাগুলো বললেন আর ঝরালেন দুচোখের অশ্রু। একটি মোবাইল সেট গলায় ঝুলিয়ে রেখেছেন। নাম্বারটা দিয়ে (০১৭৬১৫৫৭১৮৭) বললেন, ‘ মোর খবরডা প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটু জানাইয়া দেন’। এই বলে আবার অঝোর ধারায় কান্না জুড়ে দিলেন অসহায় সোনা গাজী। মুক্তিযুদ্ধে বিশাল ভুমিকা রাখা সোনাগাজী এখন অনেকটা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। তার ভাষায়,“ স্বীকৃতি চাই না পেট পুরে খেতে চাই ”।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top