সকল মেনু

‘মৃত’ বলে নবজাতক বিক্রি হতো তালুকদার হাসপাতালে

৪৯নিজস্ব প্রতিবেদক,  হটনিউজ২৪বিডি.কম ২৪ এপ্রিল : রাজধানী ঢাকার সবুজবাগ এলাকায় নন্দীপাড়া তালুকদার জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নবজাতককে মিথ্যা ‘মৃত’ ঘোষণা করে পরে বিক্রি করা হতো। এ ঘটনা ঘটতো নিয়মিত। হাসপাতালে কোনো লগবই, রেজিস্ট্রার বই নেই। অঙ্গীকারনামায় নবজাতককে মৃত উল্লেখ করে মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া হতো।

আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালের মালিক আনোয়ারা বেগম (৪২) নবজাতক বিক্রির ব্যবসা করে আসছিলেন।

ৠাব-৩ এর একটি দল একমাস অনুসন্ধান চালিয়ে শনিবার দুপুরে এ হাসপাতালে অভিযান চালায়।

জানা যায়, তালুকদার জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বাচ্চা প্রসবের জন্য বিভিন্ন রোগী আসতেন। হাসপাতালটি ১০ শয্যাবিশিষ্ট।

বুধবার দুপরে এই হাসপাতালে সাবিনা আক্তার নামের এক রোগী আসেন। সাবিনার স্বামী মো. সোহেল। সন্ধ্যায় একটি মেয়ে শিশু প্রসব করেন সাবিনা। পরে শিশুটির অবস্থা ভালো নয় দেখিয়ে বিক্রির জন্য চাপ দেন মালিক আনোয়ারা।

শিশুটির বাবা-মা দরিদ্র। তারা চাপে এক সময় বাচ্চাটি বিক্রির জন্য রাজি হন। তিনদিন পর শিশুটিকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রির বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন হাসপাতালের মালিক আনোয়ারা। এমন সময় ৠাব-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-১) এডিশনাল এসপি মোস্তাক আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল শিশুটিকে উদ্ধার করে আনোয়ারাকে হাতে-নাতে আটক করে।

এ বিষয়ে ৠাব-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-১) এডিশনাল এসপি মোস্তাক আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন এই হাসপাতালে নবজাতক কেনাবেচা হয়ে আসছিলো। আমরা খবর পেয়ে গোয়েন্দা নজরদারি করি। নিশ্চিত হয়ে শুক্রবার দুপুরে অভিযান চালাই।

তিনি বলেন, নবজাতক বিক্রির সময় মালিক আনোয়ারাকে হাতেনাতে আটক করে তিনদিনের শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। পরে নবজাতকটিকে চিকিৎসার জন্য তার মা সাবিনাসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

অভিযানের সময় হাসপাতালের টেকনিশিয়ান রাহুল চন্দ্র সাহা, দুই স্টাফ রহিমা ও শান্তিকে আটক করে এ বিষয়ে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

এদিকে ৠাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম ঘটনাস্থলে গিয়ে আনোয়ারা বেগমকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

এ বিষয়ে সারোয়ার আলম বলেন, হাসপাতালের মালিক আনোয়ারার অপরাধ দু’টি। একটি হলো, জীবিত শিশুকে মৃত ঘোষণা করা ও নবজাতক বিক্রির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকা। দুই হলো, এই হাসপাতালের কোনো লাইসেন্স নেই। লগবই বা কোনো রেজিস্ট্রার খাতা পাওয়া যায়নি। এ কারণে তাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি অনুমোদনের কোনো প্রমাণপত্রও দেখাতে পারেননি আনোয়ারা। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। নার্সিংয়ে প্যারামেডিক্যাল কোর্স করা আছে। তিনি নিজেই গর্ভবতীদের বাচ্চাপ্রসব বা সিজার করতেন বলেই ধারণা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তালুকদার জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আগের মালিক ছিলেন কবির উদ্দিন তালুকদার। ২০১৪ সালে হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়। দেড় মাস আগে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে হাসপাতালটি আনোয়ারা বেগমের কাছে বিক্রি করেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সবুজবাগ এলাকায় নন্দীপাড়া ব্রিজের পাশে ‘আমেরিকান প্লাজা’ নামের একটি মার্কেটের নীচতলায় ‘তালুকদার জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার’। তবে হাসপাতালে ঢোকার সময় চেখে পড়ে বেশ কিছু ফার্নিচারের দোকান। হাসপাতালের ভেতরে একটি ছোট সাইনবোর্ড থাকলেও বাইরে বা রাস্তায় নেই কোনো সাইনবোর্ড।

এ বিষয়ে সাজাপ্রাপ্ত আনোয়ারার স্বমী সুলতান মাহমুদ বলেন, কবির উদ্দিন তালুকদারের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে দেড় মাস আগে হাসপাতালটি কেনা হয়। এখন পর্যন্ত ঠিকমতো গোছানো হয়নি।

আমেরিকান প্লাজার এক দোকানি শাহ জামান বলেন, এখানে বেশিরভাগ সন্তান প্রসবের জন্যই রোগী আসতেন। এছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসা নিতে কেউ আসতেন না।

বাইরে থেকে ডাক্তার আসতেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত কোনে ডাক্তার আসতে দেখিনি।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top