সকল মেনু

চাঁদপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ: হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে

80be909f-c01d-46cf-a788-ecf6d713796dশাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলাসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলায় প্রচন্ড তাপদাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। গত বুধবার পর্যন্ত ২০ দিনে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মতলব আইসিডিডিআরবি (কলেরা) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় ২ হাজার রোগী। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে প্রায় ৮৮টি শিশু। এ সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের দ্বিগুনের চেয়েও বেশি। গত ২০ দিনে ৫ বছরের নিচে প্রায় ৬২%, ৬-১৪ বছর বয়সী ৩% এবং ১৫ বছরের উর্ধে ৩৫% রোগী ভর্তি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) মতলব শাখা সূত্রে জানা গেছে, এই কেন্দ্রে গত ১ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত (২০দিনে) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৭ শ’ ৫৬ জন রোগী। এর মধ্যে ৫ বছর বয়সী শিশু ১ হাজার ৯৪ জন, ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৭০ জন, ১৫ বছরের উর্ধে ৫ শ’ ৯২। উল্লিখিত সময়ে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে প্রায় ৮৮ জন রোগী। এ সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের দ্বিগুনেরও বেশি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, গত বছর উল্লিখিত ২০ দিনে ভর্তি হয়েছিল ১ হাজার ৪শ’ ২০ জন রোগী। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হয়েছিল প্রায় ৭১ জন রোগী। গতবারের তুলনায় এবার ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা অনেক বেশি। বুধবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছে ৭৫ জন রোগী।
সূত্রটি আরও জানায়, ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে চাঁদপুর সদর থেকে ২শ’ ৩৯ জন, ফরিদগঞ্জ থেকে ১শ’ ২৪ জন, হাইমচর থেকে ২৭ জন, হাজীগঞ্জ থেকে ১শ’ ২৬ জন, কচুয়া থেকে ৮৬ জন, মতলব উত্তর থেকে ৮৭ জন, মতলব দক্ষিণ থেকে ১ শ’ ৭ জন, শাহরাস্তি থেকে ৫৮ জন, বরুড়া থেকে ৭২ জন, কুমিল্লার চান্দিনা থেকে ১শ’ ২ জন, কুমিল্লা সদর থেকে ৭২ জন, দাউদকান্দি থেকে ২৯ জন, দেবিদ্বার থেকে ৪৪ জন, লাকসাম থেকে ৪৭ জন, মনোহরগঞ্জ থেকে ৩০জন, তিতাস থেকে ২৯ জন, লক্ষ্মীপুর সদর থেকে ১শ’ ১২ জন, রায়পুর থেকে ১শ’ ২৩ জন, রামগঞ্জ থেকে ৪৭ জন, শরীয়তপুরের সখীপুর থেকে ১৯ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
বুধবার আইসিডিডিআরবির মতলব শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার প্রতটি ওয়ার্ডে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ভিড়। তুলনামূলকভাবে রোগীরা ভাল সেবা পাচ্ছে এবং ২/৩দিনের মধ্যেই রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে বলে একাধিক রোগী জানিয়েছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুদি গ্রামের মুন্সী বাড়ি থেকে আসা ছয় বছর বয়সী শিশু আম্বিয়া খাতুন মীমের মা জানান, তার মেয়েকে নিয়ে গত সোমবার সকালে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আসার পর পরই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ওরস্যালাইনসহ অন্যান্য চিকিৎসা দিয়েছে। বর্তমানে সে কিছুটা সুস্থ।
আইসিডিডিআরবির মতলব শাখার জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস বলেন, দূষিত পানি পান ও ময়লা খাবার গ্রহণই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। গরমে শিশুরা ব্যাপক হারে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত ছয় মাস বয়সী শিশুদের পরিমাণ মতো খাবার স্যালাইন ও মায়ের বুকের দুধ খেতে দেয়া হচ্ছে। সাত মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের দেয়া হচ্ছে খাবার স্যালাইন, বুকের দুধ ও প্রতিদিন একটি করে বেবিজিংক। সঙ্গে খেতে দেয়া হচ্ছে সুজি, খিচুড়ি, ডাবের পানি, চিড়ার পানি ও ভাতের মাড়সহ অন্যান্য খাবার। এই রোগ এড়াতে দূষিত পানি পান ও ময়লা খাবার বর্জন করতে হবে। খাবার আগে হাত ধুয়ে নিতে হবে এবং সাধারণ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। শিশুদের ঘন ঘন পাতলা পায়খানা ও বমি হলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top