সকল মেনু

২০ বিদেশি শনাক্ত রিজার্ভ চুরিতে

Bank1460962039 নিজস্ব প্রতিবেদক,হটনিউজ২৪বিডি.কম :  ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় ২০ বিদেশি জড়িত। এদের সঙ্গে বাংলাদেশে ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও আছেন, যারা এ দেশ থেকে হ্যাকারদের লিংক দিয়ে সহায়তা করেছেন বলে সিআইডি কর্মকর্তারা বলেছেন।

সোমবার মালিবাগের সিআইডি কার্যালয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল হ্যাকাররা। পরে দুই ধাপে প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাট করে।

সিআইডির ডিআইজি শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ঘটনায় শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনে পুলিশের অপরাধ বিভাগের (সিআইডি) দুটি দল যায়। তারা ইতিমধ্যেই দেশে ফিরে এসেছে। তবে এক সপ্তাহে দেশ দুটিতে ব্যাংক, সিনেট এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বিশেষ করে টাকা চুরির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের নাম বেরিয়ে আসে। অনেকেই জড়িত থাকলেও আপাতত এ রকম সন্দেহভাজন ২০ বিদেশির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এরা শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও চীনের নাগরিক বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

তিনি আরো বলেন, এসব সন্দেহভাজন লোকই দেশগুলোর ব্যাংকে পাঁচটি অ্যাকাউন্ট খোলে। এরা এর আগেও একই ধরনের কাজ করেছে বলে সে দেশের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, এ দেশ থেকে একটি লিংক গেছে। লিংকের সিগন্যাল পাওয়ার পরই অর্থ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। এই লিংকআপ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেওয়া হয়েছে। যার সঙ্গে অবশ্যই ব্যাংকের লোকজনও জড়িত। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব তথ্য-উপাত্ত এবং প্রমাণাদি নেওয়া হয়েছে, তারই তদন্ত করা হচ্ছে। এ জন্য ল্যাপটপসহ ব্যাংকের কম্পিউটারের অনেক তথ্যও নেওয়া হয়েছে। এখন এগুলো সিআইডির বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে বাইরের তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদেরও সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। আর এসব করা হচ্ছে লিংকআপ কোথা থেকে হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে। এরপর কারা জড়িত তা সহজেই বেরিয়ে আসবে।

অপর এক প্রশ্নে সিআইডির এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরো বলেন, ওই দেশগুলোতে মানি লন্ডারিং আইনে যে বিধিবিধান রয়েছে, তা অনেকাংশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নয়। এ কারণে টাকা আনতে বা অপরাধীদের গ্রেফতারে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তদন্ত চলছে। শেষ হলেই বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নিউইয়র্ক থেকে ঘটনা জানানো হলেও ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন ব্যাংকেরই কিছু অসাধু কর্মকর্তা। সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিদের সিআইডি তদন্তের শুরুর দিন থেকেই ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বেশ কয়েকজনকে ডেকে মালিবাগের কার্যালয়ে আনা হয়। কাউকে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হলেও অনেককেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কিংবা সকাল থেকে রাত অবধি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ সময় সন্দেহভাজন এসব কর্মকর্তার বাসা থেকে খাবার এনে খাওয়ানো হয়। তাদের কম্পিউটার থেকে যেসব তথ্যের গরমিল পাওয়া যাচ্ছে, সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তারা তেমন কোনো তথ্য দিচ্ছেন না। তারা প্রতিদিন কখন অফিসে আসছেন, অফিসে কোন ধরনের কাজ করছেন, কারো সঙ্গে কথা বললেও তা কোন ধরনের, মোবাইল বা টেলিফোনে কী ধরনের ফোনালাপ করছেন, তাও অতি গোপনে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। অফিস শেষে বাসায় যাচ্ছেন, নাকি অন্য কোনো ধরনের কাজ করছেন, কোথায় যাচ্ছেন সেটিও অতি গোপনে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের মোবাইলের কললিস্টও যাচাই-বাছাই করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে তারা যেন কেউ দেশের বাইরে না যান, আর গেলেও যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে যান, সে জন্য বলা হয়েছে। ১০/১২ জন এ রকম সন্দেহভাজনের মধ্যে আবার কয়েকজন যেন কোনোভাবেই দেশের বাইরে যেতে না পারেন, তা কঠোরভাবে বলা হয়েছে। এদের ব্যাপারে ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে তাদের ব্যাপারে এখন পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়ায় প্রকাশ্যে আবার কিছুই বলা যাচ্ছে না। অবশ্য তাদের কম্পিউটার থেকে যেসব তথ্য নেওয়া হয়েছে, তা সিআইডির বিশেষজ্ঞদলের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী এমন ব্যক্তিদের নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। এরপরই নিশ্চিত হওয়া যাবে তারা কোন ধরনের অপরাধ করেছেন।

২৯ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের পত্রিকা ইনকোয়ারারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল হ্যাকাররা। এ প্রচেষ্টায় দুই ধাপে প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাট করলেও ৮৭০ মিলিয়ন ডলার পাচারে ব্যর্থ হয় তারা।

প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি করা অর্থ ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়। এর মধ্যে ফিলিপাইনের অ্যাকাউন্টে নেওয়া ৮ কোটি ডলার ক্যাসিনোর মাধ্যমে হংকংয়ে পাচার করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top