সকল মেনু

আজ কল্যাণ সম্পাদক ৬৫-তে পা দিলেন

indexযশোর প্রতিনিধি: ৮ এপ্রিল। প্রথিতযশা ও যশোরের সাহসী কলম সৈনিকদের পথিকৃত প্রেসক্লাব যশোরের সাবেক সভাপতি ও যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা ৬৪ বছর পূর্ণ করে আজ ৬৫ বছরে পা দিলেন। ১৯৫২ সালের এই দিনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাদুড়িয়া থানার কলিঙ্গা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। পিতা মরহুম মোকছেদ আলী, মাতা মরহুমা আয়েশা খাতুন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি সাংবাদিক পেশার সাথে যুক্ত হন। এদেশের বরেণ্য সাংবাদিক মরহুম কবি নাসির উদ্দিন ও অন্যান্যদের সহচার্যে এসে সাংবাদিকতা পেশার প্রতি অনুপ্রাণিত হন। লেখাপড়ার পাশাপাশি মাসিক মুকুল, সাপ্তাহিক গণদাবি ও নতুন দেশ-এ সাংবাদিকতার হাতে খড়ি। পরবর্তীতে পেশা হিসেবে বেছে নেন সাংবাদিকতা। যোগ দেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সংবাদ-এর জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক গণকণ্ঠের মফস্বল সম্পাদক (গণকণ্ঠের প্রকাশনা বন্ধ হলে), সাপ্তাহিক সত্যকথা’র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। পরবর্তীতে ফিরে আসেন যশোরে। দায়িত্ব নেন দৈনিক ঠিকানার নির্বাহী সম্পাদকের। দীর্ঘ ১৮ বছর যাবত সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে ১৯৮৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক কল্যাণের সম্পাদনা ও প্রকাশনা শুরু করেন। অদ্যাবধি দৈনিক কল্যাণের প্রকশনা অব্যাহত রয়েছে। দৈনিক কল্যাণ সম্পাদনা ও প্রকাশনার মতো কঠিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাকে অনেক প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখিন হতে হয়েছে। তবুও বিচ্যুত হননি তিনি এ পেশা থেকে। সাংবাদিকতা পেশার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সাথে নিজেকে যুক্ত রয়েছেন।
একরাম-উদ-দ্দৌলার সহধর্মিনী নিলুফার ইয়াসমিন। একমাত্র পুত্র এহসান-উদ-দৌলা মিথুন প্রথম আলো’র যশোর জেলার স্টাফ ফটো সাংবাদিক, কন্যা রুবাইয়াত সুলতানা ও সুমাইয়া সুলতানা। দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি তার ৬৫তম জন্মদিনে সকলের শুভাশিস ও দোয়া কামনা করেছেন।
আজ সন্ধ্যায় দৈনিক কল্যাণ পরিবার নিজ দপ্তরে আয়োজন করেছে এক অনুষ্ঠানমালার। অনুষ্ঠানে কেক কাটা, মিষ্টি মুখ ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে কল্যাণ সম্পাদকের জন্মদিন পালিত হবে।

জীবন কথা
দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক ও প্রকাশক একরাম-উদ-দ্দৌলা ১৯৫২ সালের ৮ এপ্রিল ভারতের পশ্চিমবাংলার ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমার বাদুড়িয়া থানার কলিঙ্গা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম মোকসেদ আলি ও মাতা মরহুমা আয়শা খাতুনের পুত্রদের মধ্যে তার অবস্থান পঞ্চম। শিমুলিয়া গ্রামের স্কুলে তার প্রথম পাঠশিক্ষা শুরু। ১৯৬৪ সালে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে দেশ ছেড়ে আশ্রয় নেন তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের যশোর শহরে। ভর্তি হন শহরের মুসলিম একাডেমীতে। আর্থিক সংকট, স্কুলের বেতন দেওয়ার সামর্থ নেই। বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল দেয়া হয় না। ঐ স্কুল ছেড়ে ভর্তি হন তৎকালীন নিউ মডেল একাডেমীতে। সেখানেই একই অবস্থা। লেখাপড়ার অদম্যস্পৃহা।
ঢুকে পড়েন কর্মজীবনে। কম্পোজিটর হিসাবে চাকুরী নেন পূর্বাচল প্রেসে। সামান্য বেতন। এ সময়ে যশোর সেবাসংঘ বালিকা বিদ্যালয়ে স্থাপিত হয় নৈশ বিদ্যালয়। নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন সেখানে। কিন্তু এখান থেকে স্কুলটি তুলে দিলে নৈশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা মিলে গ্রামে গ্রামে যেয়ে বাঁশ, নগদ অর্থ তুলে ঘোপে হাজী মাহমুদুর রহমানের দেয়া জমিতে তৈরী করেন গোলপাতার নৈশ বিদ্যালয়। সারাদিন কম্পোজিটরের হাড় ভাঙ্গা খাটুনি শেষে হাজির হন নৈশ বিদ্যালয়ে। এখানে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরা। নতুন স্কুল, শিক্ষা বোর্ডের মঞ্জুরী নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ এসএসসি পরীক্ষা দেবার ব্যবস্থা করলেন নতুন খয়েরতলা হাইস্কুল থেকে। ১৯৭০ সালে ঐ স্কুলের মাধ্যমে এসএসসি পরীক্ষায় ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হলেন। এত কর্মব্যস্ততার মাঝে রাজনীতিবিদ শহীদ মোশাররফ হোসেন এলএলবি ও ছাত্রনেতা আলী হোসেন মনির সহচার্যে এসে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। যোগদেন তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগে।
১৯৬৯ সালে প্রেসে ভোটার লিস্ট করার মধ্যদিয়ে কম্পোজিটর জীবনের অবসান। ঐ সময়ে সাপ্তাহিক গণদাবি ও মাসিক মুকুল সম্পাদক কবি নাসিরউদ্দিন আহমদের সহচার্যে এসে সাংবাদিকতা জগতে প্রবেশ। এরই মধ্যে ভর্তি হন যশোর সরকারী মাইকেল মধুসূদন কলেজে। সাংবাদিকতা করা ও শিক্ষার সাথে সাথে ছাত্র রাজনীতি। ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধের গোপন সংগঠন নিউক্লিয়াসে যোগদেন। দেশের স্বাধীনতার জন্যে গোপনে প্রশিক্ষণ ও সংগঠিত করার কাজে লিপ্ত হন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ফিরে ছাত্ররাজনীতি ও সাংবাদিকতার মধ্যদিয়ে দেশ পুনঃগঠনের কাজে অংশ গ্রহণ। ১৯৭২ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় দক্ষিণাঞ্চল প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান। ১৯৭৩ সালে রাজনৈতিক গুরু মোশাররফ হোসেন এলএলবি তার বাড়িতে আততায়ীর গুলিতে নিহত হলে তার রক্ত ছুয়ে শপথ নেন রাজনীতি না করার। সে সিদ্ধান্ত আজও বহাল আছে। লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে সাংবাদিকতা। এরই মধ্যে ঐ কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিএ পাশ করেন। কর্মজীবনের ভীড়ে আর পড়াশুনা হয়নি। পেশা হিসাবে সাংবাদিকতা।
দৈনিক সংবাদের যশোর প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান। পরবর্তীতে সংবাদ ছেড়ে দৈনিক ঠিকানায় বার্তা সম্পাদক হিসাবে কর্মজীবন শুরু। কিছুদিন পর ঠিকানা ছেড়ে ঢাকায় গণকণ্ঠের মফঃস্বল সম্পাদক হিসাবে যোগদান। পত্রিকাটি আর্থিক কারণে বন্ধ হলে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সত্যকথা’র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ। এখানে দায়িত্ব পালনকালে ঠিকানা সম্পাদক আবুল হোসেন মীরের অনুরোধে আবার যশোরে প্রত্যাবর্তন। দৈনিক ঠিকানায় নির্বাহী সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বগ্রহণ। এখানে দায়িত্ব পালনকালে দৈনিক কল্যাণ পত্রিকার প্রকাশনার অনুমতি গ্রহণ। ঠিকানা থেকে অব্যাহতি নিয়ে ১৯৮৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় নিজ সম্পাদনা ও প্রকাশনায় দৈনিক কল্যাণ। উত্থান-পতন, ঘাত-প্রতিঘাত আর আর্থিক সংকটের মধ্যদিয়ে আজো দৈনিক কল্যাণ’র প্রকাশনা অব্যাহত রয়েছে।
দৃঢ় চেতনার এই মানুষটি শুধু সাংবাদিকতা জগতেই নয় যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে রয়েছে তার সরব পদচারণা। অভিনয় করেছেন বহু মঞ্চ নাটকে। দায়িত্ব পালন করেছেন যশোর ইনস্টিটিউট নাট্যকলা সংসদের সম্পাদক হিসেবে। তার দায়িত্ব পালনকালে সংগঠনটি দেশের বিভিন্ন স্থানে নাট্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রশংসা কুড়ানোসহ একাধিক পুরস্কার লাভ করেছে। একাধিকবার যশোর ইনস্টিটিউট পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংগঠনটির উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। যশোর ইনস্টিটিউট মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের দীর্ঘদিন বিভিন্ন পদ অলংকৃত করে স্কুলটির উন্নয়নে দিয়েছেন নেতৃত্ব।
যশোরে পালবাড়ী মোড়ে ভাস্কর্য ‘বিজয়-৭১’ এবং বকুলতলায় দেশের বৃহত্তম ‘বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল’ নির্মাণের অন্যতম রূপকার একরাম-উদ-দ্দৌলা।
প্রেসক্লাব যশোরে ২০১০-২০১২ মেয়াদে সভাপতি হিসাবে দায়িত্বপালনকালে ক্লাবের ৫০ বছরের ইতিহাস পাল্টে দেন।  অভুতপূর্ব উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে। দেশের আধুনিক প্রেসক্লাব হিসাবে দৃষ্টি নন্দন উন্নয়নে সাংবাদিকরাসহ যশোরবাসী কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করে একরাম-উদ-দ্দৌলাকে।
বর্তমানে যশোর উদীচীর উপদেষ্টা, পরিবার কল্যাণ সমিতি ও যক্ষ্মা নিরোধ সমিতির প্রচার সম্পাদক, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর জীবন সদস্য, যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের নির্বাহী সদস্য, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদের সভাপতি হিসাবে সংগঠনগুলোর নেতত্ব দিচ্ছেন।
সামাজিক ব্যক্তিত্ব একরাম-উদ-দ্দৌলা তার সাংসারিক জীবনে অর্ধাঙ্গীনি হিসাবে পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের মেয়ে নিলুফার ইয়াসমিন নিলু’কে। তাদের একমাত্র পুত্র এহসান-উদ-দৌলা (মিথুন) প্রথম আলোর স্টাফ ফটো সাংবাদিক। দু’কন্যা রুবইয়াত সুলতানা লীনা বিবাহিত। সুমাইয়া সুলতানা লিয়া অনার্সের ছাত্রী হিসেবে সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও লেখালেখির জগতে ইতোমধ্যে স্থান করে নিয়েছে।
দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক একরাম-উদ-দ্দৌলা সাংবাদিকতা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে কাজ করার জন্য পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা ও পুরস্কার। তার প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সাংবাদিকতার জন্য আহমদুল কবির স্মৃতি স্বর্ণপদক লাভ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top