সকল মেনু

বিদেশিরা নাগরিকত্ব পাবে ১০ লাখ ডলারে

১০.নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ২৩ মার্চ : বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেতে বিদেশি বিনিয়োগকারীকে আগের চেয়ে দিগুণ অর্থ গুনতে হবে।

কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারী ১০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করলে কিংবা ২০ লাখ মার্কিন ডলার কোনো স্বীকৃত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবেন।

আগে পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ ও ১০  লাখ মার্কিন ডলার স্থানান্তর করলে বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পেতেন।

নাগরিকত্ব পেতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণ করে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করাসহ শিল্পখাতে বিশেষ প্রণোদনার সুযোগ রেখে ‘জাতীয় শিল্পনীতি, ২০১৬’ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার সচিবালয়ে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভায় এটির অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, নতুন নীতিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবার বেলায় আগের আর্থিক পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারী ১০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করলে কিংবা ২০ লাখ ডলার নিয়ে আসলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবেন।

তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীর স্থায়ী রেসিডেন্টশিপ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে কমপক্ষে ৭৫ হাজার ডলার বিনিয়োগের যে শর্ত রয়েছে, তা বাড়িয়ে দুই লাখ ডলার করা হয়েছে।

সচিব বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য নানা রকম সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। নতুন আইনে ‘ সম্ভবনাময় বিদেশি বিনিয়োগকারীকে’ ন্যূনতম পাঁচ বছরের মাল্টিপল ভিসা দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, তাদের জন্য বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ থাকছে।’

নতুন নীতিতে নারী শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে জানিয়ে মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘প্রাক-বিনিয়োগ পরামর্শ, প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন,  উদ্বুদ্ধকরণে সহায়তাসহ তাদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে।

নীতিতে নারী উদ্যোক্তার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যদি কোন নারী ব্যক্তি মালিকানাধীন বা প্রপ্রাইটরি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বত্ত্বাধীকারী বা প্রপ্রাইটররা, অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫১ শতাংশ অংশ যদি থাকে তবে সেটি নারী শিল্প উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হবে।

তিনি আরো বলেন, নতুন নীতিতে শিল্পায়নের গতি বাড়াতে বিশ্ব সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এ খাতে বিশেষ প্যাকেজ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শিল্প বিনিয়োগ সহজ করতে ইন্টিগ্রেটেড ওয়ান স্টপ সার্ভিস সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বলে নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, নতুন নীতি বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনার দায়িত্বে থাকছে জাতীয় শিল্প উন্নয়ন পরিষদ। ৪০ সদস্যের এ পরিষদের সভাপতি হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ পরিষদকে সহায়তা করবে জাতীয় শিল্প উন্নয়ন পরিষদের নির্বাহী কমিটি। এ কমিটির নেতৃত্বে থাকছেন শিল্পমন্ত্রী।’

সচিব বলেন, ২০১০ সালের নীতি হালনাগাদ করে নতুনভাবে শিল্পনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। আগের নীতির ধারাবাহিকতা নতুন নীতিতে বহালে আছে। শিল্প নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আগের মতোই আছে।’

নতুন নীতিতে বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের সংজ্ঞায় অর্থের পরিমাণের সীমা বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান মোহাম্মদ শফিউল আলম।

তিনি বলেন, উৎপাদশীল ক্ষেত্রে মূলধন ৫০ কোটি টাকার বেশি ও ৩ শ’ জনের বেশি শ্রমিক যেখানে কাজ করে সেটি বৃহৎ শিল্প হিসেবে বিবেচিত হবে। সেবা শিল্প খাতের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যেখানে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ব্যয়সহ ৩০ কোটি টাকার বেশি কিংবা যেসব প্রতিষ্ঠানে ১২০ জনের বেশি শ্রমিক নিয়োজিত সেটা বৃহৎ শিল্প।’

সচিব বলেন, উৎপাদনশীল শিল্পের ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১৫ কোটি টাকার বেশি হলে ও ১২১ থেকে ৩শ শ্রমিক যেখানে নিয়োজিত আছে তা মাঝারি শিল্প হিসিবে বিবেচিত হবে। আর সেবা শিল্পের ক্ষেত্রে মাঝারি শিল্প ২ কোটি টাকা থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত এবং যেখানে ৫১ থেকে ১২০ জন শ্রমিক কাজ করে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ক্ষুদ্র শিল্পের সংজ্ঞায় নীতিতে বলা হয়েছে উৎপাদনশীল ক্ষেত্রে ৭৫ লাখ টাকা থেকে ১৫ কোটি টাকা কিংবা যে শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৩১ থেকে ১২০ জন শ্রমিক কাজ করে। সেবা শিল্পের ক্ষেত্রে ১০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত কিংবা ১৬ থেকে ৫০ জন শ্রমিক যেখানে কাজ করেন।’

তিনি বলেন, মাইক্রো শিল্প হচ্ছে যেখানে মূলধন ১০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা কিংবা যে শিল্পে ১৬ থেকে ৩০ জন বা তার চেয়ে কম লোক কাজ করে। কুটির শিল্প হচ্ছে যেখানে পরিবারের সদস্য নিজেরাই শিল্প প্রতিষ্ঠান চালায়। কারুশিল্পীর শৈল্পিক মনন ও শ্রমের ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে যে শিল্প নতুন নীতি অনুযায়ী তাই হস্ত ও কারুশিল্প।

শফিউল আলম আরো জানান, সৃজনশীল শিল্প বলতে বোঝায় যার শৈল্পিক মনন ও উদ্ভাবনী মেধা, দক্ষতা ও কলাকৌশল বা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নান্দনিক ও সৃষ্টিশীল পণ্য উৎপাদনে সহায়তা করা।

দেশের গতিশীল শিল্পায়ন ও টেকসই বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে কিছু প্রণোদনা দেওয়ার কথা নীতিতে বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে, মূলধনী বিনিয়োগের উপর নির্দিষ্ট পরিমাণ ভর্তুকি, উৎপাদিত পণ্যের উপর থেকে কর ও শুল্ক অব্যাহতি, এ্যাক্রেডিটেশন সনদের ফি চার্জ ও বিমা স্কিমের প্রিমিয়ামের খরচ পুনর্ভরণের ব্যবস্থা, চলতি মূলধনের সুদের উপর ভর্তুকি।’

এলাকাভেদে বিভিন্ন শিল্প খাত-উপখাত বিদ্যমান আয়কর বিধি-বিধান অনুযায়ী কর অবকাশ ও অবচয় সুবিধা পাবে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে ব্যবহৃত আমদানি করা কাঁচামালের শুল্ক ও কর হার সম্পূর্ণরূপে তৈরি পণ্য আমদানির উপর আরোপিত শুল্ক ও কর হার থেকে কম হবে বলেও নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

শফিউল আরো বলেন, ‘শিল্প ক্লাস্টার ও শিল্প পার্কের অবকাঠামো, অনুন্নত এলাকায় স্থাপিত শ্রম নিবিড় শিল্পের উন্নয়ন এবং পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থা এবং পিপিপি (সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব) উদ্যোগে সম্পদ বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এ উদ্দেশ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে খাস জমি ও চরাঞ্চলের ভূমি নিয়ে একটি ল্যান্ড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠায় ল্যান্ড ব্যাংক থেকে ভূমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে।’
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top