সকল মেনু

না ফেরার দেশে চলে গেলেন দিদি

indexহটনিউজ ডেস্ক : পারভিন সুলতানা দিতি বাংলা চলচ্চিত্রে ছিলেন সাড়া জাগানো নায়িকা । অল্প যে কজন নায়িকা ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন তিনি তাদের অন্যতম। এ ছাড়াও তিনি ছোট পর্দায় কিছু একক ও ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করছেন। তিনি রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেছেন। বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবেও তাকে দেখা গেছে।

জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর জন্ম ১৯৬৫ সালে নারায়ণগঞ্জে। তিনি রাজধানীর লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে বি. এ. পাশ করেন। মিডিয়া জগতে তিনি প্রথম পা রাখেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।

গান গাইতে গাইতেই দিতি বিটিভির প্রযোজক ও অভিনেতা আল মনসুর-এর নজরে পড়েন। আল মনসুর তার ‘লাইলী-মজনু’ নাটকে দিতিকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনেতা মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপরীতে অভিনয়ের জন্য নেন। আর নাটকটিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দিতি সবার নজরে চলে আসেন। এরপর পরিচালক ফখরুল আবেদীন বৈরাগী তার ‘ইমিটেশন’ নাটকে দিতিকে নেন।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য অভিনেতা-অভিনেত্রীর খোঁজে ১৯৮৪ সালে শুরু করে ‘নতুন মুখ-এর সন্ধানে’ শিরোনামে সন্ধান কার্যক্রম। দিতি এতে অংশ নেন এবং নির্বাচিত হন। নির্মাতা উদয়ন চৌধুরী এরপর দিতি এবং অভিনেতা আফজাল হোসেনকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘ডাক দিয়ে যাই’ চলচ্চিত্র। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবিটি মুক্তি পায়নি। ১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ও আজমল হুদা মিঠু নির্মিত ‘আমিই ওস্তাদ’ চলচ্চিত্রই বলা যেতে পারে দিতি অভিনীত প্রথম ছায়াছবি।

১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ও আমজাদ হোসেন নির্মিত ‘হীরামতি’ ছবিতে অভিনয় করেছেন দিতি। ‘প্রিয় শত্রু’ চলচ্চিত্রে তিনি পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা প্রসেনজিৎ-এর সাথে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসিত হন। ১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ও আব্দুল্লাহ আল মামুন নির্মিত ‘দুই জীবন’ চলচ্চিত্র তার অভিনয় জীবনের জন্য মাইলফলক। এই চলচ্চিত্রের দুটি গান আজও মানুষের মুখে ফেরে।  গান দুটি হলো ‘তুমি আজ কথা দিয়েছো, বলেছো দুটি মন ঘর বাধবে…’ এবং ‘তোমায় একদিন আমি না দেখিলে তোমার মুখের কথা না শুনিলে… ।’

১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ও সৈয়দ হারুন নির্মিত ‘চরম আঘাত’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রের প্রতিটি গান ব্যপক জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে কুমার শানু এবং মিতালী মুখার্জীর গাওয়া গান ‘ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, তোমায় নিয়ে হাজার বছর বাঁচতে বড় ইচ্ছে হয়’ এখনো মানুষের মুখে ফেরে। ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ও আজিজ আহমেদ বাবুল নির্মিত ‘স্নেহের প্রতিদান’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। সুভাষ দত্ত নির্মিত ‘স্বামী-স্ত্রী’ চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

নব্বই দশকে ‘পাকিজা গার্ডেন প্রিন্ট শাড়ি’ টিভি বিজ্ঞাপনে তার সাবলিল উপস্থাপনা ছিলো প্রশংসনীয়। বিজ্ঞাপনের সেই বিখ্যাত জিঙ্গেল ‘পড়েছি কপালে টিপ চোঁখে কাজল …’ ব্যাপকভাবে নন্দিত হয়।

অভিনেত্রী দিতি ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৮৬ সালে অভিনেতা সোহেল চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ঘরে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে। ১৯৯৮ সালে সোহেল চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন- এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু এই বিয়ে টেকেনি।

সুন্দর অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র দিয়েই দর্শক হৃদয় জয় করেছিলেন দিতি। ঢাকাই চলচ্চিত্রে ২৮ বছর দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে গেছেন। প্রায় ২০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী দীর্ঘ সময় চলচ্চিত্র ও নাটকে প্রাণখোলা অভিনয় করে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে গেছেন।

দর্শকনন্দিত এই অভিনেত্রী মস্তিষ্কে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। গত বছর জুলাইয়ে তিনি ভারতের চেন্নাইয়ে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজি (এমআইওটি) হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় গত বছর নভেম্বরে চিকিৎসার জন্য একই হাসপাতালে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা ফলপ্রসু হওয়া আর সম্ভব নয় বলে জানালে গত ৮ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। এরপর থেকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এই হাসপাতালেই রোববার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top