সকল মেনু

দুবাইয়ে হয়রানির প্রতিশোধ নিতে দেশে খুন

১ নঙনিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ১৭ মার্চ : দুবাই প্রবাসী আব্দুস শুক্কুরের সঙ্গে সেদেশে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল তার দূরসম্পর্কের ভাগ্নে ইয়াছিনের।  সেই বিরোধের জের ইয়াছিনকে দুবাইয়ের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন শুক্কুর।  দেশে ফিরে শুক্কুরের উপর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে ইয়াছিন।  এজন্য অর্থ সংগ্রহ করতে শুক্কুরের ছোট ভাই প্রবাসী নূরুল আলমের কিশোর ছেলে নূর মোহাম্মদ সাঈদকে অপহরণের পরিকল্পনা করে ইয়াছিন ও তার সহযোগীরা।  কিন্তু অপহরণে ব্যর্থ হয়ে নূরুল আলমের বাসায় ডাকাতি করতে যায় তারা।  সেখানে গিয়ে সাঈদের মা পারভিনকে খুন করে।

চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর ইয়াছিন ও তার সহযোগী মনছুর আদালতে জবানবন্দি দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে।  এর ফলে দশদিন আগে বায়েজিদ বোস্তামি থানার কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটিতে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে।

ইয়াছিন ও মনছুর বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নওরিন আক্তার কাকনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।  জবানবন্দি শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানো আদেশ দেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস আই) সন্তোষ কুমার চাকমা।

০৫ মার্চ রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির ১৩ নম্বর সড়কের ৩৮ নম্বর প্লটে আলহাজ্ব জনাবা খাতুন ভিলার তিনতলায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।  ছয়তলা ভবনটির মালিক ফটিকছড়ি উপজেলার ছাদেকনগর গ্রামের প্রবাসী আব্দুস শুক্কুর।  পারভিন আক্তার (৩৬) তার ছোট ভাই দুবাই প্রবাসী নূরুল আলমের স্ত্রী।

বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশ প্রথমে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুক্কুরের ছেলেকে গ্রেফতার করেছিল।  তবে শেষ পর্যন্ত দু’জনের জবানবন্দিতে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র।

সূত্রমতে, আদালতে জবানবন্দিতে তারা জানিয়েছে, দূর সম্পর্কের ভাগ্নে ইয়াছিন তিন বছর আগে শুক্কুরের ভবনের নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে কাজ করত।  এ হিসেবে শুক্কুর ও নূরুল আলমের পরিবারের সঙ্গে তার ভাল যোগাযোগ ছিল।

ঘটনার দিন সন্ধ্যার পরে ইয়াছিন পারভিন আক্তারের সাথে মোবাইলে কথা বলে বাসায় ছেলে সাঈদ ছাড়া আর কেউ না থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়।  তারপর তারা হাটহাজারী থেকে রইফাবাদ এলাকায় আসে।  ইয়াছিন অন্ধকারে পারভিনের বাড়ির পাশে রাস্তায় অবস্থান নেয়।  তিন সহযোগী মনছুর, ইসহাক ও রানা বাড়ির ভিতরে ঢুকে।  কিন্তু তখনও গৃহশিক্ষক বাসায় থাকায় তিনজন সিঁড়িতে বসে থাকে।  রাত সোয়া ৯টার দিকে গৃহশিক্ষক বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাসায় ঢুকে পড়ে।

আসামি ইসহাক এবং রানা পারভিন আক্তারের মুখ চেপে ধরে টেনেহিঁচড়ে খাট থেকে তাকে মেঝেতে ফেলে দিয়ে হাত পা বেঁধে ফেলে।  রানা পারভিন আক্তারকে উপুড় করে মাথার উপর বসে থাকে।  আসামি মনছুর পারভিনের আলমিরা থেকে ১৮ হাজার টাকা, চার ভরি স্বর্ণালংকার ও মোবাইল নিয়ে নেয়।

ঘটনার পরদিন তারা লুট করা স্বর্ণালংকার রাউজান থানার গহিরায় নাছির টাওয়ারে গহিরা ফ্যাশন জুয়েলার্স নামে একটি দোকানে বিক্রি করে।   স্বর্ণ বিক্রির টাকা চারভাগে ভাগ করে মনছুর ও ইয়াছিন টেকনাফ এবং ইসহাক ও রানা অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের এস আই সন্তোষ কুমার চাকমা, ওয়ালি উদ্দিন আকবর, আফতাব ও বায়েজিদ থানা পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম টেকনাফ থানার হোটেল নাফ ইন্টারন্যাশনালে অভিযান চালিয়ে ইয়াছিন ও মনছুরকে আটক করেন।

কেন এই হত্যাকাণ্ড ?
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে ইয়াছিন জানিয়েছে, ইয়াছিন প্রায় তিন বছর আগে দূর সম্পর্কের মামা শুক্কুরের বাসার দারোয়ান হিসেবে কাজ করেছিল।  ভবন নির্মাণের সময় শুক্কুর তাকে টাইলস সরবরাহের কাজ দেবে বলে জানিয়েছিল।  কিন্তু কাজ না দিলে শুক্কুরের সঙ্গে ইয়াছিরেন মনোমালিন্য হয়।

পরে অবশ্য শুক্কুর ইয়াছিনকে দুবাই নিয়ে গিয়ে তার সবজি দোকানে মাসিক সাত’শ দিরহাম বেতনে চাকরি দেয়।  শুক্কুর মাসিক বেতনের টাকা থেকে ভিসার খরচ কেটে রাখতে থাকলে ইয়াছিন আবারও ক্ষুব্ধ হয়।  এছাড়া শুক্কুর মারধর করত বলে ক্ষোভ ছিল ইয়াছিরেন।  সে শুক্কুরের পাশের আরেকটি দোকানে চাকরি নিয়ে চলে যায়।  এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শুক্কুর দুবাই পুলিশ দিয়ে তাকে গ্রেফতার করিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।  বাংলাদেশে পাঠানোর আগে অবশ্য ইয়াছিন ১৭ দিন জেল খাটে।

বাংলাদেশে ফেরার পর ইয়াছিন শুক্কুরের উপর প্রতিশোধের পরিকল্পনা নেয়।  সহযোগীদের কথামত প্রতিশোধ নিতে টাকা সংগ্রহ করতে প্রথমে সাঈদকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়।  সেটা ভেস্তে গেলে সাঈদের বাসায় ডাকাতির পরিকল্পনা করে।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top