সকল মেনু

সোনালি শীষে উঁকি দিচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

৪৯.নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ১০ মার্চ : মাঠের পর মাঠ শুধু রবিশস্য। রয়েছে গম, মসুর, খেসারি আর ছোলা। কৃষক এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন এসব রবিশস্য ঘরে তোলার। রাজশাহীর সব উপজেলার মাঠগুলোর একই চিত্র।

বোরো আবাদে উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় রাজশাহী অঞ্চলের কৃষক রবিশস্য চাষে এখন বেশি আগ্রহী। আর রবিশস্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে গম। প্রতি মৌসুমে এ জেলায় গমের চাষ বাড়ছে। এ মৌসুমেও জেলায় বিশেষ করে বরেন্দ্র এলাকায় গমের বাম্পার ফলনের ব্যাপারে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট চাষি এবং কৃষিবিদরা। আর ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মাঠ থেকে গম উঠতে শুরু করবে। তাই বর্তমানে সোনালি শীষে উঁকি দিচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন।

আঞ্চলিক গম গবেষণা কেন্দ্র, রাজশাহীর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ইলিয়াস বলেন, এবছর যথাসময়ে বীজ বপন করার কারণে এবং গমের জন্য যে ধরনের শীতের প্রয়োজন, তা থাকায় গমের ফলন ভালো হবে। সর্বোপরি গম চাষের জন্য চলতি বছর আবহাওয়া ছিল অনুকূল। তিনি বলেন, জেলার চাষিরা এ বছর বেশি জমিতে গমচাষ করেছেন। গমচাষে সেচ কম লাগায় খরচ তুলনামূলক কম। এ ছাড়া বোরো চাষে উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় প্রতিবছর গম চাষ বাড়ছে। এটি ইতিবাচক বিষয়। কারণ, আমাদের প্রতিবছর বিদেশ থেকে গম আমদানি করতে হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গম গবেষণা কেন্দ্র থেকে এ বছর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষিদেরকে ২৪ ধরনের গমবীজ সরবরাহ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য গমবীজের মধ্যে রয়েছে- প্রদীপ, বিজয়, শতাব্দী ও বারিগম-২৬। এ সব জাতের গমে পোকার আক্রমণ কম হয়। ফলে ফলন ভালো হয়। আর তুলনামূলকভাবে অন্য জাতের গমের চেয়ে এসব জাতের চাষে উৎপাদন ব্যয় কম। ফলে চাষিরা এসব জাতের গমচাষ করে বেশি লাভবান হন। এসব কারণেই উল্লিখিত জাতগুলোর গমবীজ কৃষকদের সরবরাহ করা হয়েছে।

এদিকে জেলার কৃষকরা গম কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই গমগাছের শীষ সোনালি রঙ ধারণ করতে শুরু করেছে। বেশকিছু জমিতে গম প্রায় পেকে গেছে। এসব জমির গম আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাটা শুরু হবে। আর বাকি জমিতে পুরোপুরিভাবে গম কাটা শুরু হবে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে।

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার সিংগাইর গ্রামের গমচাষি আজাদ আলী বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারো  আমি দুই বিঘা জমিতে গমচাষ করেছি। এ পরিমাণ জমি থেকে গত বছরের মতো এবারো ৩০ মণ গম পাওয়ার আশা করছি। গত বছর এসময় আমি গমের দাম মণপ্রতি পেয়েছি ৮০০ টাকা করে। যার বাজার মূল্য ছিল ২৪ হাজার টাকা। এবারো সমপরিমাণ টাকা পাওয়ার আশা করছি।

তিনি বলেন, এক বিঘা গমচাষ করতে খরচ হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। এ হিসেবে দুই বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। ফসল বিক্রি করে পাওয়া যাবে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। লাভ হবে প্রায় ২০ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, অথচ একবিঘা বোরো আবাদ করতে ব্যয় হয় ছয় হাজার টাকা। অনেক ক্ষেত্রে বোরো আবাদ করে উৎপাদন ব্যয় উঠে আসে না। একারণে আমাদের এলাকার কৃষক বোরো ছেড়ে গমচাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। প্রতিবছর বাড়ছে গমের চাষ।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কদমশহর এলাকার কৃষক আরশাদ আলী। তিনি বলেন, আমি গত পাঁচ বছর থেকে বোরো আবাদ ছেড়ে দিয়েছি। এবার সর্বোচ্চ আট বিঘা জমিতে গমের চাষ করেছি। গত বছর বিঘাপ্রতি ১৬ মণ করে গমের ফলন পেয়েছি। খুব বেশি হলে সর্বোচ্চ আর ১০ দিন পর থেকে গম কাটতে শুরু করব। এবার আরো বেশি ফলন এবং দাম পাবো বলে আশা করছি। আমার মতো এলাকার অন্য কৃষকরাও বোরো ছেড়ে গমচাষ শুরু করেছেন। এর পরিমাণ বাড়ছে। কারণ, গমচাষ এখন অনেক বেশি লাভজনক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাজশাহীর উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালী জানান, চলতি মৌসুমে ২৯ হাজার ৫৫৭ হেক্টর জমিতে গমচাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু চাষ হয়েছে ৩১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৭১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। তবে এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, চলতি মৌসুমের আবহাওয়া গমচাষের জন্য অনুকূল। একারণে বেশি উৎপাদন হওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
হটনিউজ২৪বিডি..কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top