সকল মেনু

যশোরের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন হিসাব নিকাশ

download (4)রিপন হোসেন, যশোর থেকে :সংসদীয় আসনের সীমানা পূণ:নির্ধারনের পর যশোরের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন হিসাব নিকাশ। নতুন সীমানার নেতারা নড়ে চড়ে বসতে শুরু করেছেন। অনেক নেতা আগামী নির্বাচনকে ঘিরে কষছেন নানা অংক। ভোটারদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে নতুন দিনের আশা আখাংকা। এতো দিন নানা কারনে এসব এলাকার উন্নয়ন বঞ্চিত ভোটাররা সংসদীয় আসনের এই পরিবর্তনকে দেখছেন ইতিবাচক হিসেবে। তবে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা রাজনৈতিক নেতা ও তাদের কর্মীদের মধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে দেখা দিয়েছে হতাশা। অন্যদিকে এসব সংসদীয় আসনের ভোটারদের মধ্যে এই বিভাজন সৃষ্টি করেছে উল্লাস আর আনন্দের। চলছে মিস্টি বিতরণ আর দোয়া কামনা।

যশোরের ৪টি সংসদীয় আসনের সীমানা পূণ:নির্ধারণ করে সরকারী গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশিন। সব রকমের জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন যশোর সদর আসনের মানুষ। দীর্ঘ দিন ধরে এ বিষয়টি নিয়ে যারা রাজপথে লড়েছেন সেই সব রাজনৈতিক নেতারা বিষয়টিকে দেখছেন নিজেদের বিজয় হিসেবে। অপর দিকে বাঘারপাড়ার নেতারা এই ঘটনায় তাদের পরাজয় মেনে নিতে পারছেন না। অভয়নগরের নেতারাও সাবেক সীমানায় ফিরে আসাকে পজেটিভ ভাবেই দেখছেন। কেশবপুরের ভোটাররা এই বিভাজনকে দেখছেন তাদের নেতৃত্বের বিজয় হিসেবে। আর মনিরামপুরের মানুষ এটা কে তাদের রাজনৈতিক বিজয় বলে ভাবতে পেরে খুশি। সর্বপরি যশোর জেলার ৪টি সংসদীয় আসনের এই সীমানা পূণ:নির্ধারনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ভোটারদের আস্থা অর্জনের পথে একধাপ এগিয়ে থাকলেন বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিক সমাজের নেতারা।

গত সেনাসমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যশোর জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে মধ্যে ৪টির সীমানা পূণ:নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন। যা নিয়ে শুরু থেকে জন্ম দেয় রাজনৈতিক বিতর্কের। নির্বাচন কমিশনরে সেই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে অনেকে আইনি লড়াই শুরু করেন। কিন্তু দেশে গণতান্ত্রিক শাষন ব্যবস্থা না থাকার কারনে সে লড়াইয়ে অনিবার্য পরাজয় স্বীকার করে নিতে হয় নেতাদের। ফলে বিরোধীতা সত্বেও গত সংসদ নির্বাচন হয় নতুন সীমানায়। ওই বিভাজনের মাধ্যমে যশোর – ৩ সদর আসনের সীমানা কমিয়ে আনা হয়। যশোর সদর উপজেলার শহর সংলগ্ন ৪টি ইউনিয়ন যথা ইছালী, ফতেপুর, কচুয়া ও নরেন্দ্রপুর ইউনিয়কে কেটে বাঘারপাড়া উপজেলার সাথে একীভুত করে যশোর -৪ বাঘারপাড়া সংসদীয় আসন গঠন করা হয়। অপর দিকে যশোর -৪ বাঘারপাড়া অভয়নগর সংসদীয় আসনের সীমানা থেকে অভয়নগর উপজেলাকে বিচ্ছিন্ন করে যশোর -৬ কেশবপুর আসনের সাথে একীভুত করে নির্বাচন কমিশন। একই সাথে যশোর -৫ মনিরামপুর উপজেলার ১৭ নম্বর মনোহরপুর ইউনিয়নকে মনিরামপুর থেকে বিচ্ছিন্ন করে কেশবপুর -৬ আসনের সাথে যুক্ত করা হয়। নির্বাচন কমিশনরে এই হযবরল সিদ্ধান্তে সে সময় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা। কিন্তু সেনাসমর্থিত সরকার সে সময় ক্ষমতায় থাকার কারনে কোন প্রতিকার তারা পাননি। গত সংসদ নির্বাচনের পর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া এসব উপজেলার ডাকসাইডের নেতারা নড়েচড়ে বসেন। শুরু করেন জনমত গঠন। পাশাপাশি চলে আইনি লড়াই আর প্রশাসনিক লবিং। সব মিলে গত বছরের শুরুর দিকে নির্বাচন কমিশনে যশোরের ৪টি সংসদীয় আসনের সীমানা পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে ৬০ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও তাদের পরিষদের মেম্বরগণ রেজুলেশন আকারে আবেদন পত্র দাখির করেন। একই সাথে নির্বাচন কমিশনে প্রত্যেকটি আসনের কয়েক হাজার মানুষের গণস্বাক্ষর সম্বলিত আবেদন জমা পড়ে। চলতি বছরের শুরুর দিকে নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পক্ষে বিপক্ষে নানা সওয়াল জবাবের পর গত সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন যশোরের ৪টি সংসদীয় আসনের সীমানা পূণ:নির্ধারণ করে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনে। এর ফলে যশোরের শার্শা উপজেলা নিয়ে যশোর -১, চৌগাছা -ঝিকরগাছা উপজেলা নিয়ে যশোর -২, যশোর সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে যশোর -৩, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা এবং সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে যশোর -৪, মনিরামপুর উপজেলা নিয়ে যশোর -৫ এবং কেশবপুর উপজেলা নিয়ে যশোর -৬ সংসদীয় আসনের সীমানা পূণ:নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে এই সীমানা পূণ:নির্ধারণকে নিজেদের বিজয় বলে মনে করছেন যশোর সদর আসনের রাজনৈতিক দলের নেতারা। যশোর পৌরসভার মেয়র মারুফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, বর্তমান সংশোধনীর মাধ্যমে সদর উপজেলার ্রায় ১০ লাখ মানুষের স্বপ্নের বিজয় হয়েছে। গত সংসদ নির্বাচনের আগে িেট করা হয়েছিলো সেটিতে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ ছিলেন। আমরা সাধারণ মানুষের সেন্টিমেন্ট নিয়ে রাজণীতি করি। ফলে তাদের সেন্টিমেন্টে অঅঘাত করে এমন কিছু করা ঠিক নয়। ফলে সেই বিষয়টি বুঝতে পেরে নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সঠিক ও যথার্থ। এর ফলে যারা দীর্ঘ দিন এই দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করছে তাদের বিজয় হয়েছে। ফতেপুর ইউনিয়নরে চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল হক বিটু ওরফে খোকন বলেন, এই দাবি আদায়ের জন্য অনেক দিন রাজপথে ছিলাম। মানুষের কাতারে থেকে লড়াই সংগ্রাম করেছ্ িআজ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিতদ হয়েছে । ভালো লাগছে। এই উপজেলার মানুষ তাদের পছন্দের নেতাকে নির্বাচিত করতে পারবেন। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। ইছালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, ইছালী ইউনিয়ন সদর উপজেলার বাইরে থাকার কারনে কাঙ্খিত কোন উন্নয়ন হয়নি। এলাকার মানুষ নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এই রায়ে জনতার বিজয় হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বাঘারপাড়ার মানুষ। প্রতিবাদে তারা হরতাল, অবরোধসহ আন্দোলনের নানামুখি কর্মকান্ড করছে। আওয়ামীলীগ নেতা নজরুল ইসলাম বলেন, বাঘারপাড়া উপজেলা এই জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী অবহেলিত। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই উপজেলাটি অভয়নগরের সাথে একীভুত থাকার কারনে বরাবরই নেতৃত্বে ছিল অভয়নগরের নেতারা। এই উপজেলার নাগরিকদের ভোটের অধিকার থাকলেও ছিল না কোন উন্নয়নে অংশীদারিত্ব। ফলে গত সংসদ নির্বাচনের আগে এই উপজেলার সাথে সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন কে একীভুত করে নতুন একটি সংসদীয় আসন গঠন করা হয়। এলাকার মানুষ তাদের স্থানীয় নেতাকে এমপি করে সংসদে পাঠায়। ফলে গত ৪ বছরে এলাকার উন্নয়নে অনেক কাজ হয়েছে । কিন্তু সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সাবেক সীমানায় ফিরে যাওয়ায় বাঘারপাড়ার মানুষ ক্ষুব্ধ। এ বিষয়ে ভিন্ন রকমের প্রক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অভয়নগরের নেতারা। বিএনপি নেতা মতিয়ার রহম,ান ফারাজি জানান, অভয়নগর একটি বন্দর নগরী। এই উপজেলাকে নিয়ে একটি পৃথক সংসদীয় আসন গঠনের দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের। তবে শেষ পর্যন্ত অভয়নগর কে বাঘারপাড়া উপজেলার সাথে একীভুত করার কারনে হয়তো কিছুটা সমস্যা হবে। তবে নের্তৃত্ব নির্বাচনে এবার অভয়নগরবাসী প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পারবে। মনিরামপুরবাসীও নির্বাচন কমিশনরে বর্তমান সিদ্ধান্তে খুশি। গেজেট প্রকাশের আগে নির্বাচন কমিশন এই উপজেলাকে ২ ভাগ করে কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলার সাথে একীভুত করার ঘোষনা দেয়। ক্ষোভে ফেঁটে পড়েন এই উপজেলার মানুষ। তাদের আন্দোলনের মুখে নির্বাচন কমিশন পিছু হটে। শেষ পর্যন্ত এলাকার মানুষের দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচন কমিশন যশোর -৫ নির্বাচন আসনটি গঠন করেছে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন ভট্টাচার্য চাঁদ বলেন, মনিরামপুর যশোরের সর্ববৃহৎ একটি উপজেলা। ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলাকে দুই ভাগ করার সিদ্ধান্ত থেকে নির্বাচন কমিশন পিছিয়ে আসার কারনে উপজেলাবাসী খুশি, আনন্দিত। তবে নির্বাচন কমিশনের চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশী উপকৃত হয়েছে কেশবপুরের মানুষ। কারন গত সাড়ে ৪ বছরে এই উপজেলার মানুষ নানা ভাবে বঞ্চিত হয়েছে। এলাকার মানুষের ভোটে নির্বাচিত এমপি হুইপ আব্দুল ওহাব কেশবপুরবাসীকে দুই চোখে দেখেন বলে অবিযোগ করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা আমির হোসেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের কারনে উপজেলার মানুষ বঞ্চনার হাত থেকে রেহায় পাবে। এলাকার উন্নয়নে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এবার তাদের পছন্দ মতো কাজ করতে পারবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top