সকল মেনু

বাংলা বিকৃত করে ইংরেজি ধাঁচের কথা বন্ধ করুন

৫.নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ২১ ফেব্রুয়ারি : বাংলা ভাষাকে বিকৃত না করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেকের বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে বাংলাকে বিকৃত করে ইংরেজি ধাঁচের কথা বলার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, যখন দেখি অনেকের কাছে বাংলা ভাষা ভুলে যাওয়াটা যেন বিরাট কাজ, তখন কষ্ট হয়। যেন বাংলা ভুলে গেলেই গুণের কাজ! একটা শ্রেণি তৈরি হয়েছে, ছেলে মেয়েদের ইংরেজি মিডিয়ামে না পড়ালে যেন তাদের ইজ্জতই থাকে না। অথচ ইংরেজি মিডিয়াম থেকে কয়টা ছেলে ভালো ফল করে?

রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শহীদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা করছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবী আজ গ্লোবাল ভিলেজ। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে মানুষকে বিভিন্ন ভাষা শিখতে হয়। বিভিন্ন ভাষা শেখাটা মহৎ। সবাই তা শিখতেও পারে না। এজন্য বিশেষ দক্ষতা লাগে। মানুষ বিভিন্ন ভাষা শিখুক, কিন্তু ভাষার বিকৃতি চাই না।

ভাষার বিকৃতি বন্ধের পাশাপাশি বাঙালির নিজস্ব স্বকীয়তা বিকশিত করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও বিনোদন মাধ্যমগুলোকে অবদান রাখার আহ্বান জানান তিনি।

খেলাধুলার পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলে মেয়েরা খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে উন্নত জীবন পাবে। তারা বিপথে যাবে না। জঙ্গিবাদে জড়াবে না।

এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

ছেলে মেয়েদের খেলাধুলা সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে ক্যাটাগরি দুইয়ে উন্নীত করায় ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটি সারাবিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, আরও করবে। আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সারাবিশ্বের মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও গবেষণায় অনন্য অবদান রাখবে।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষাগুলোকেও সংরক্ষণের তাগিদ দেন তিনি।

আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম ভবিষ্যতে কেউ যেন বন্ধ করতে না পারে সেজন্য আইন করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ এর সরকারের সময় আমরা এ প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ শুরু করি। কিন্তু মাঝখানে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে এর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আমরা আবারও ক্ষমতায় এসে নির্মাণ শুরু করি।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ‍তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতৃভাষাকে ভালোবাসি, আমরা মায়ের ভাষায় কথা বলবো, মাকে মা বলে ডাকবো। সেজন্য ভাষার অধিকার আদায় করতে গিয়ে আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, ৪৭ এর পর থেকে বাঙালির ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্যের ওপর বারবার আঘাত করেছে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী। তারা আমাদের জাতি ধ্বংস করতে ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত করেছে। কী দুর্ভাগ্য আমাদের বাঙালি জাতির, এ জাতির কিছু সন্তান ছিলও যারা তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলো।

বাঙালির স্বাধীনতা ও অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, কোনো অর্জনই হঠাৎ করে আসে না। এক লক্ষ্য থাকতে হয়। নেতৃত্ব দিতে হয়। সেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আমাদের জাতির পিতা।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি অর্জন অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পেতে হয়েছে। আজকে আমরা যা পেয়েছি, জাতির পিতার জন্য পেয়েছি।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার কথা স্মরণ করে তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গোটা দেশ যেন আবার পরাধীনতার নাগপাশে আবদ্ধ হয়ে যায়। এই সময়টাতে অনেকে এমন ছিল, যেন পাকিস্তানের পদলেহন করতে পারলেই তারা কৃতার্থ হন। আজো সেরকম আছেন অনেকে। ২১ বছর পর ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানুষ আবার স্বাধীনতার সত্য ইতিহাস জানতে পারে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ ‘একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির মননের বাতিঘর’ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী, ইউনেস্কোর ঢাকা অফিসের প্রধান বিয়াট্রিস কালদুন প্রমুখ।

হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top