সকল মেনু

উৎসবের আমেজে ভাসছে গদখালীর চাষীরা

indexযশোর থেকে আব্দুল ওয়াহাব মুকুল: আনন্দ আর আনন্দ। যশোরের গদখালী ফুলের রাজ্যের বাসিন্দাদের মনে এখন শুধুই আনন্দ। যেন আনন্দের জোয়ারে তারা ভাসছেন। গত কয়েক বছরের লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখায় তাদের এই আনন্দের সীমা পরিসীমা নেই। তাই উৎসবে মাতোয়ারা ফুল রাজ্যের নারী পুরুষ আর শিশু কিশোররা।
বসন্ত উৎসব আর বিশ্ব ভালোবাসা উৎসবকে ঘিরে যশোর তথা দেশের ফুলের রাজ্য খ্যাত গদখালীতে এবার প্রায় ১৫ কোটি টাকার ফুল হাত বদল হয়েছে। গত ৭ দিনে এই কোটি কোটি টাকার গ্লাডিউলাস, গোলাপ, জারবেরা, চন্দ্র মল্লিকা, রজনীগন্ধা, ভ’ট্টা, হলুদ গাঁধা ফুলের মহাসমারোহ যেন এক স্বপ্নের পরিবেশ তৈরী করছে। মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে ফুল আর ফুল। রাতদিন এসব ফুলের ক্ষেতে কাজ করছেন ফুল চাষী নারী পুরুষ সকলেই। উদ্দেশ্য বাজার ধরা। নানা রাজনৈতিক প্রতিকুলতার কারনে গত বছর গুলোতে এখানকার চাষীরা তাদের উৎপাদিত ফুলের তেমন একটা দাম না পেয়ে যখন হতাশ হয়ে পড়ছিলেন ঠিক তেমন একটা মুহুর্তে এবারের বসন্ত উৎসব আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে দেশের ফুলের বাজার গুলোতে ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি পায় কয়েক গুণ।
এ কারনে ফুলের পাইকারী বাজার গুলোতে বৃদ্ধি পায় ফুলের দাম। যা শেষ পর্যন্ত আকাশচুম্বি রূপ ধারন করে। গত ৩ দিনে যশোরের পাইকারী ফুলের বাজার গদখালীতে প্রতিটি গোলাপ ১৫ থেকে ২০ টাকা, প্রতিটি জারবেরা ২০ থেকে ২৫ টাকা, চন্দ্র মল্লিকা ১০ থেকে ২০ টাকা, রজনীগন্ধার স্ট্রিক ১০ থেকে ১৫ টাকা, হলুদ গাঁধার শ’ বিক্রি হয়েছে ৩ শো থেকে ৫ শো টাকা পর্যন্ত। যা দেখে হতবাক হয়েছেন চাষীরাই।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি ও গদখালি ফুল চাষী ও ব্যবসায়ী কল্যান সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, এ বছর যশোরাঞ্চলের দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী বিদেশী ফুলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গদখালী অঞ্চলেই রয়েছে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমি। এসব জমিতে কৃষকরা জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ হরেক রকমের ফুলের চাষ করেছে। গত কয়েক বছর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও প্রাকৃতিক প্রতিকুল পরিবেশের কারনে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফুলের ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। কিন্তু এ বছরের প্রেক্ষাপট ভিন্ন অনুকুল আবহাওয়া আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারনে এখানকার চাষীরা তাদের ফুলের বেশ চড়া দাম পাচ্ছেন।
এ মৌসুমে ফুলের উৎপাদনও অতীতের যে কোন মৌসুমের চেয়ে অনেক গুন ভালো। তিনি জানান, এবছর  চাষীরা তাদরে ফুলের যে দাম পাচ্ছেন তাতে গত কয়েক বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। তিনি ফুলের বর্তমান বাজার দর উল্লেখ করে বলেন, তার পরও পাইকাররা বাজারে ফুল পাচ্ছেন না। কারন এবছর মানুষের মনে শান্তি আছে। উৎসবের মৌসুম চলছে। নানা বরণে ফুলের ব্যবহার বাড়ছে। ফুল কেনার বিষয়ে ক্রেতাদরে আগ্রহ বেড়েছে। ফুল কেনা কে মানুষ এখন তাদের নিত্যদিনের অংশ মনে করে। তাছাড়া দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারনে গদখালীর চাষীরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত জেলা শহর গুলোতে অর্ডার মোতাবেক তাদের উৎপাদিত ফুল নির্বিঘেœ সরবরাহ করতে পারছেন।
চাষীরা বলছেন, ফুলের উৎপাদন আর দাম দুটোই এবছর ভালো। ফলে তাদের মনে বেশ আনন্দ অনুভূত হচ্ছে। গদখালীর পানিসারা, হাড়িয়াদাড়া, খলিসা, হাড়িয়া নিমতলা, আড়সিংড়ি, বল্লা, মেঠোপাড়া, সবিন্দপুর, নিশ্চিন্তপুর, নারাঙ্গালী, কানার আলী, নীলকন্ঠপুর, কৃষœচন্দ্রপুর, টানিয়া, কালিয়ানী, পটুয়াপাড়া, চানপুর, সৈয়দপুরসহ অত্র অঞ্চলের প্রায় ১ শো গ্রামে চলছে ফুলের উৎসব। এসব গ্রামের হাজার হাজার বিঘা জমিতে শোভা পাচ্ছে হরেক রকমরে ফুল। পানিসারা গ্রামের স্বর্ণপদক প্রাপ্ত ফুল চাষী শের আলীর ম্যানেজার জানান, গত তিন দিনে তিনি ১৫ বিঘার জারবেরা ক্ষেত থেকে ৩০ লাখের বেশী টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। তার মতো অনেক চাষীই এবছর গড়ে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার ফুল বেচা কেনা করেছেন বসন্ত উৎসব আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে।
এ বছর গত ৭ দিনে গড়ে যশোরের গদখালী ফুলের পাইকারী বাজারে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকার ফুল হাত বদল হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম। হাড়িয়া গ্রামের রেকসোনা বেগম জানান, তিনি তার ২ বিঘা গোলাপের ক্ষেত থেকে গত ১০ দিনে তিনি ৪ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। যা গত কয়েক বছরের মোট বিক্রির প্রায় অর্ধেক। বল্লা গ্রামের ইসারত গাজী জানালেন তিনি ৩ বিঘা রজনীগন্ধা ফুলের চাষ করেছিলেন। গত ৭ দিনে তিনি এই ক্ষেত থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। একই ধরনের তথ্য জানালেন চানপুরের রফি উদ্দিন, বাইশা গ্রামের রমজান আলী, ওলিয়ার রহমান, হান্নান কাজীসহ আরো অনেকেই। তারা সকলেই এবছরের বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আর বসন্ত বরণ উৎসবের বেচাকেনায় খুব খুশি। এই খুশি ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামে নারী পুরুষ সকলের মধ্যে। খুশি গ্রামের শিশু কিশোরাও।
সব আনন্দ একাকার হয়ে গেছে ফুলের ক্ষেতে। মাঠের পর মাঠ শোভা পাচ্ছে হরেক রকমরে দেশী বিদেশী ফুল।  লাভজনক হওয়ায় ফুলের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাবে এমনটাই বলছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। এদিকে এই দুই দিবসকে সামনে করে যশোরের খুচরা ফুলের দোকানগুলোতেও ছিল দিন ব্যাপী ফুলের কেনা বেচা। নানা বষয়েস নারী পুরুষ আর শিশু কিশোরার ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রিয় জনকে ফুল উপহার দিতে। কিনছেন ফুল দিচ্ছেন ফুল। কেউ কেই পরিবার পরিজনকেও ফুল দিতে ভুল করছেন না। অনেকে ফুল দিয়ে সাজাচ্ছেন নিজের ঘর আর অফিস। সব কিছু মিলেই এবার যশোরের ফুলের বাজার রমরমা। এছাড়া আসন্ন ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরেই প্রস্তুত যশোরের ফুলের ব্যবসায়ীরা। টার্গের কোটি কোটি টাকার ফুল বাজারজাত করার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top