সকল মেনু

৫৫ হাজার চাষির ফিরছে সুদিন

Labon1455040856নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ১০ ফেব্রুয়ারি : স্বাধীনতার পর এই প্রথম মাঠপর্যায়ে চাষিরা প্রতিকেজি লবণের দাম পাচ্ছেন ১০ টাকা করে। এটা সম্ভব হয়েছে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি বন্ধ এবং সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে। এতে উপকূলের ৫৫ হাজার চাষির ফিরছে সুদিন। তারা এখন মহাখুশি।

তাদের দাবি, সরকারের যনে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। আর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজারের লবণ দিয়ে দেশের জাতীয় চাহিদা পূরণ সম্ভব।

কক্সবাজারের উপকূলবর্তী সদর উপজেলার খুরুশকুল ও ইসলামপুরের লবণ মাঠ ঘুরে দেখা যায়, হাজার হাজার একর জমিতে চাষিরা সমুদ্রের লবণাক্ত পানি জমিয়ে তাতে সূর্যের তাপ দিচ্ছেন। আর ওই তাপে পানি শুকিয়ে তৈরি হচ্ছে লবণ। আর বিকেল হতে না হতেই চাষিরা দলবদ্ধভাবে সেই লবণ গুদামে তুলছেন।

কক্সবাজার ও বাঁশখালী উপকূলের ৬০ হাজার একর জমিতে ৫৫ হাজারের বেশি চাষি এখন লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে দেশের মোট চাহিদার লবণ এখান থেকে সরবরাহ করা হলেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ ছিলেন চাষিরা। কিন্তু এই প্রথম মাঠপর্যায়ে চাষিরা কাক্সিক্ষত লবণের দাম পেয়ে মহাখুশি।

সদর উপজেলা ইসলামপুরের চাষি হেদায়েত উল্লাহ বলেন, বিসিকের সহায়তা নিয়ে ২০ একর জমিতে এবার ভাল মানের লবণ উৎপাদন করেছি। উৎপাদনও ভালো হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে মাঠে উৎপাদিত প্রতিমণ লবণ বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকায়। তা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০০ টাকায়। লবণের সর্বোচ্চ দাম পেয়ে আমরা খুবই খুশি।

চৌফলদন্ডী এলাকার চাষি কলিম উল্লাহ বলেন, গত ১০ বছর ধরে প্রতিকেজি লবণ দুই থেকে চার টাকার বেশি দামে বিক্রি করতে পারিনি। কারণ একটি সিন্ডিকেট সবসময় ভারত ও মিয়ানমার থেকে লবণ এনে বাজার সয়লাব করত। কিন্তু এবার সরকারের সিদ্ধান্তে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি বন্ধ থাকায় মাঠপর্যায়ে উৎপাদিত প্রতিমণ লবণ ৪০০ টাকা করে বিক্রি করছি।

খুরুশকুলের চাষি নুরুল আমিন বলেন, বিদেশ থেকে লবণ আমদানির কারণে মাঠে উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায়নি। সরকার লবণ আমদানি বন্ধ ঘোষণা করায় মাঠে উৎপাদিত লবণের দাম দ্রুত বেড়ে যায়। যার ফলে স্বাধীনতার পর এই প্রথম আমরা মাঠে উৎপাদিত লবণ প্রতিকেজি ১০ টাকায় বিক্রির সুযোগ পাচ্ছি।

একই উপজেলার পোকখালী, ভারুয়াখালী, গোমাতলীসহ জেলার টেকনাফ, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলায় লবণের বাম্পার উৎপাদন হচ্ছে। আর চাষি সর্বোচ্চ মূল্যে মাঠে উৎপাদিত লবণ বিক্রি করছেন।

কক্সবাজার লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী বলেন, কয়েক বছর ধরে লবণ চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাননি। ফলে তারা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে একপর্যায়ে অনেকে লবণ উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু সরকারের লবণ আমদানি বন্ধ ঘোষণার পর এবার বিপুল উৎসাহ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এবার লবণের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় তারা খুবই খুশি।

তিনি আরো বলেন, লবণের এ অবস্থা ধরে রাখতে বিদেশ থেকে লবণ আমদানিকারী চক্রটির প্রতি সরকারের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এ ছাড়া সরকার যদি উদ্যোগ নিয়ে কক্সবাজারে লবণ বোর্ড গঠন করে তাহলে চাষিরা সবসময় লবণের ন্যায্যমূল্য পাবেন।

বিসিক লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আবসার উদ্দিন  জানান, লবণের সর্বোচ্চ মূল্য পাওয়ায় এখন চাষিরা মহোৎসবে উৎপাদন করছেন। গত বছর ১৫ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন লবণের জাতীয় চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ১৬ লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক টন।

তিনি জানান, এবার সারাদেশে লবণের চাহিদা ১৭ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন। যদি প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হয় তাহলে কক্সবাজারের লবণ দিয়ে দেশের জাতীয় চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার ও বাঁশখালীর ৫৫ হাজার প্রান্তিক চাষিসহ লবণ উৎপাদন ও বিপণনে জড়িত অন্তত ৫ লাখের অধিক মানুষ।

হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top