সকল মেনু

পাটকলগুলোকে হোল্ডিং কোম্পানি করার তাগিদ

৪. অর্থনীতি ডেস্ক,  হটনিউজ২৪বিডি.কম ৪ ফেব্রুয়ারি :  অর্থের অভাবে সরকারি মালিকানাধীন পাটকলগুলোর পেনশনে যাওয়া বিপুল সংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারি পেনশন ও গ্রাচ্যুইটির টাকা পাচ্ছেন না।

পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় বলেছে পেনশনে যাওয়া প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক-কর্মচারির পেনশন ভাতার পাওনা মেটাতে প্রায় তিনশ’ কোটি টাকার প্রয়োজন। পেনশনের পাওনা পরিশোধসহ এ খাতের সমস্যা মেটাতে প্রয়োজন ১৮শ’ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রণালয় বলেছে পাওনা টাকা পরিশোধের আগে ২০১১ সালের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতাধীন পাটকলগুলোকে হোল্ডিং কোম্পানি করতে হবে।

বৃহস্পতিবার দেশের পাটকলগুলোর বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, অর্থসচিব, বস্ত্র ও পাট সচিবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে সরকারি পাটকলগুলোর সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বিদ্যমান সমস্যা দূর করার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে আরো কয়েকটি বৈঠকের প্রয়োজন হবে বলে বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সরকারি মালিকানাধীন পাটকলগুলোর বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে ২০১১ সালে সরকারের সঙ্গে বিজেএমসি’র একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুয়ায়ী সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন ২৬টি পাটকলকে পর্যায়ক্রমে হোল্ডিং কোম্পানিতে রূপান্তরিত করতে হবে।

এক্ষেত্রে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রথমে পাঁচটি পাটকলকে হোল্ডিং কোম্পানিতে রূপান্তরিত করতে হবে। তবে কওমি ও পিপলস জুট মিলস বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। বৈঠকে  এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়।

সূত্র জানায়, ২০১১ সালে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সেগুলোই এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। লোকসান দেওয়া পাটকলগুলোকে টেনে তোলার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী সব সময় বিরোধিতা করে আসলেও রাজনৈতিক চাপে পাটকলগুলো চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

প্রত্যেকটি পাটকলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শ্রমিক থাকা সত্বেও বিগত সময়ে প্রতিটি সরকারই নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে। ফলে পাটকলগুলোতে অতিরিক্ত শ্রমিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে বিজেএমসি’র দেনার পরিমান দিন দিন বাড়ছে।

সরকারি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিজেএমসি লোকসান দিয়েছে ৪৯৭ কোটি টাকা। আর ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দিয়েছে ৬৪০ কোটি টাকা। আর এ লোকসান কাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে প্রতি অর্থবছরই ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার।

এ অবস্থায় সরকার আর ভর্তুকি দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান চালু রাখার পক্ষে না থাকার পাশাপাশি পাটকলগুলো চালু রাখারও চেষ্টা চালাচ্ছে। হোল্ডিং কোম্পানির আওতায় যারা প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে পারবে তারা থাকবে আর যেগুলো পারবে না সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পথ অবলম্বন করছে বলে সূত্র জানায়।

সূত্রে বলা হয়, পাটকলগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জনবল, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগি দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা, অতিরিক্ত বেতন-ভাতা, পুরাতন যন্ত্রপাতির কারণে উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারন রয়েছে।

এ ছাড়াও পাটকলগুলোতে রাজনৈতিক কর্মকান্ড এত বেশি যে সরকার চাইলেও নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে না। আর  এ কারণে পাটকলগুলোর বিষয়ে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের চেয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

বৈঠকে পাটকলগুলোর সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আরো কয়েকটি বৈঠক করে একটি সুপারিশ তৈরি করে চার সপ্তাহ পর আবার বসবেন মন্ত্রিরা। ওই বৈঠকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সূত্র জানায়, দেশে এখন ২৬টি সরকারি পাটকল আছে। বিজেএমসির তত্ত্বাবধানে এসব পাটকল পরিচালিত হয়। পাটকলগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ৭শ’ টন পাটজাত পণ্য উৎপাদিত হয়। সব মিলিয়ে কাজ করেন ৮০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা। তাদের বেতন পরিশোধে প্রতি মাসে সংস্থার ব্যয় হয় ৬০ কোটি টাকা।

বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার পক্ষে এ অর্থ যোগান দেয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। আর পেনশনে যাওয়া শ্রমিকরা প্রতিদিনই প্রতিমন্ত্রী, বিজেএমসিসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে  ধর্ণা দিচ্ছেন।

হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top