সকল মেনু

থমকে আছে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর হাতিয়ায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া

থমকে আছে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর হাতিয়ায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া
থমকে আছে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর হাতিয়ায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া

ওবাইদুল হক আবু চৌধুরী,বিশেষ প্রতিবেদক,৩০ নভেম্বর ২০১৫, নিরাপদনিউজ : কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির সরিয়ে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া দ্বীপ উপজেলার পাশে ঠ্যাঙ্গামারা দ্বীপে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।

এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে খবরটি প্রকাশ করেছে এএফপি। দ্য টেলিগ্রাফ, গার্ডিয়ানসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমেও খবরটি প্রকাশিত হয়েছে।
মিয়ানমার শরণার্থীবিষয়ক সেলের প্রধান অতিরিক্ত সচিব অমিত কুমার বল এএফপিকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হাতিয়া দ্বীপে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প অবশ্যই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, এ বিষয়ে এরই মধ্যে বেশ কিছু অনানুষ্ঠানিক পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।
পর্যটন শহর কক্সবাজারে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শরণার্থীদের শিবিরগুলো নোয়াখালীর দ্বীপ হাতিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অমিত কুমার বল আরো জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো কক্সবাজার থেকে ‘সুবিধাজনক’ স্থানে সরাতে কয়েক মাস আগেই বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উখিয়া -টেকনাফে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী করণের নেপথ্যে কাজ করছে এনজিও সংস্থা
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না যেতে এবং এদেশে স্থায়ী ভাবে বসবাস করাতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে বিদেশী কিছু এনজিও সংস্থা। ওই সব এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজকর্ম করাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কিছু এনজিওর কার্যক্রম রোহিঙ্গা শিবিরে সরকার নিষিদ্ধ করলেও তারা আইনের তোয়াক্কা না করে বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা জঙ্গি মদদ দাতা ওই সব এনজিও সংস্থার লোকজন গোপনে ক্যাম্পে ঘুরে গেলেও কারো বলার থাকে না। যার ফলে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের অভ্যন্তরে কি চলছে তা বলা মুশকিল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ওই ক্যাম্পে ৪ শতাধিক রোহিঙ্গা শ্রমিক দুইটি এনজিও সংস্থার তত্বাবধানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, রোহিঙ্গারা এ অঞ্চলের বনজ, মৎস সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি, সামাজিক-পরিবেশ, শিক্ষা, সাংস্কৃতি, আইন শৃংখলার অবনতি সহ কৃষ্টিগত বিভিন্ন ব্যাপারে ক্ষতির পরিমান বাড়তে থাকলেও সমস্যা সমাধানে আর্ন্তজাতিক সংস্থা গুলোর তেমন মাথা ব্যথা না থাকায় এক যুগ পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত উখিয়া-টেকনাফের অর্ধশতাধিক পয়েন্ট দিয়ে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে। তবে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আটক করে বিজিবি সদস্যরা প্রতিদিন মিয়ানমারে ফেরত পাঠাচ্ছে।

রোহিঙ্গা শরনার্থী সমস্যা সমাধানের মুখ্য বাধাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গাদের সেবার নামে নিয়োজিত বিদেশী সংস্থা গুলো। মিয়ানমারে সম্প্রতি সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ, রামু ও পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে ১৯৯১-৯২ সালে ১৯টি আশ্রয় শিবিরের মাধ্যমে ২ লক্ষ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার ফলে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষ ৩৭ হাজার শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হয়। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাই-কমিশন বা ইউএনএইচসিআর, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকার যৌথ ভাবে তাদের নিজ নিজ বাস্তভিটায় পুণ:বাসন করে।

২০০৫ সালে তৎকালিন সরকার ইউএনএইচসিআরের সাথে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা স্বারকের মাধ্যমে শরণার্থী প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে পড়ে। স্মারক চুক্তি মতে রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না সহ বিভিন্ন বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী শর্তের বেড়াজালে বন্দি হয়ে সাড়ে সাত হাজার রোহিঙ্গার মিয়ানমার কর্তৃক পক্ষের ছাড় পত্র থাকা সত্বেও তাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। যদিও শরণার্থীদের গ্রহণ করতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ট্রানজিট ঘাটে একাধিক বার অপেক্ষা করার পরও ইউএনএইচসিআরের চাপাচাপিতে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেরত প্রেরণ সম্ভব হয়নি।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ একাধিক বার দীর্ঘ সময় ধরে শরণার্থী প্রত্যাবাসনে জোর তৎপরতা চালালেও মিয়ানমারের সম্মতি আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় প্রায় পাঁচ লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গা নাগরিক এবং কক্সবাজার সদর, ঈদগড়, রামু, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদম, সদর, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, চট্টগ্রাম মহানগর, চন্দনাইস, লোহাগাড়া, পটিয়া, সাতকানিয়া সহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে ও সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রায় সাড়ে চার লক্ষের মত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী সহ গুরুত্বপূর্ণ সূত্রে প্রকাশ।
২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার সফরের অন্যতম আলোচ্য বিষয়ের আলোকে রোহিঙ্গা কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্থ এতদঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবী প্রধান মন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান সহ সীমান্ত সমস্যার কার্যকরী সমাধান হবে এমন প্রত্যাশা করেছিল। ওই সময় দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ, বাণিজ্য সম্প্রসারন সহ বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির সাথে বৈঠকে সে দেশের রাষ্ট্রপতি থান সুয়ে নাগরিক হিসাবে ছাড়পত্র দেওয়া প্রায় সাড়ে সাত হাজার রোহিঙ্গাদের ইউএনএইচসিআর এর মাধ্যমে গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেছিল।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের একটি অঞ্চলে সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক নিরাপত্তা সহ সার্বিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রোহিঙ্গারা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের এ অঞ্চলের সরকারি বন বিভাগের পাহাড়, টিলা, সমুদ্র উপকূলীয় চরাঞ্চল দখল করে এসব সম্পদ উজাড় করে রোহিঙ্গারা তাদের বসতি স্থাপন অব্যাহত রেখেছে। টেকনাফের নয়াপাড়া ও কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে নিবন্ধিত ৩০ হাজার এবং অনিবন্ধিত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তারা প্রতিনিয়ত পাহাড় কেটে, বনাঞ্চল উজাড় করে জ্বালানি ও আবাসনের চাহিদা পূরণ করছে।

বিশাল এ রোহিঙ্গারা নানা অনৈতিক কাজের পাশাপাশি সমুদ্র ও অন্যান্য উৎসে অবাধে মৎস শিকার করে যাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে বিয়ে শাদী করে, এতে এদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশ, কৃষ্টির সাথে মিশে ভবিষ্যত প্রজন্মদের উৎকন্ঠার দিকে যাচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা সহ প্রায় সকল উপজেলার প্রত্যেকটি আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলাদা টেনশনে ভোগতে হয় বলে বার বার আলোচনা হয়ে আসছে।

উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়া পাড়া শরনার্থী শিবির ও সংলগ্ন বস্তিতে যেভাবে রোহিঙ্গারা অবাধে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে তা ফেলে এরা কোন সময় মিয়ানমারে ফেরত যাবে না বলে আশংকা প্রকাশ করছে স্থানীয়রা।
সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই সপ্তাহিক রেশন সামগ্রী পাচ্ছে তারা। সদ্য ভুমিষ্ট শিশুর জন্য ও পুর্ণ বয়স্ক লোকের সম-পরিমান রেশন সামগ্রী ছাড়াও বাড়তি খাদ্য সামগ্রী প্রদান, সার্বক্ষণিক প্রাথমিক থেকে উন্নত যে কোন ব্যয়বহুল চিকিৎসা, শিক্ষা লাভের সুযোগ অবাদে যত্রতত্র যাতায়াত, নারী-শিশু ও মাদক পাচার, বিভিন্ন স্থানে পতিতাবৃত্তি সহ প্রায় সার্বিক অনৈতিক পাচ্ছে।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের বিশেষ কিছু মহল এদেশে স্থায়ী করণের পায়তারা চালাচ্ছে।

যার ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। তিনি কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ আলোচনা করে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top