সকল মেনু

নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে বিএনপির

gboy_1339766703_1-bnp-flag1ঢাকা: বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। আগামী ঈদ-উল ফিতরের পরে দলটির জাতীয় কাউন্সিলে এ পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। 
সূত্র মতে, সম্প্রতি চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করলেও সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুরোধে দলে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

এতে পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত নেতাদের যেমন মূল্যায়ন করা হবে, তেমনি বাদ দেওয়া হবে সুবিধাভোগীদের। এজন্য তালিকাও তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমেরিকায় অবস্থানরত এক বিএনপি নেতা।

তারেক রহমানের ওই ঘনিষ্ঠ নেতা টেলিফোনে হটনিউজকে জানান, বিএনপির বিপদকালে ও গত সাড়ে চার বছরে আন্দোলন-সংগ্রামে যারা মাঠে ছিলেন তাদের তালিকা করা হয়েছে। এ তালিকা ধরেই দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত নেতাকর্মীদের পদোন্নতি দেওয়া হবে।

একই সঙ্গে দলকে আরো গণতান্ত্রিক ও আধুনিক করতে সৎ, যোগ্য ও শিক্ষিতদের মূল্যায়ন করা হবে এবার।
আর বাদ যাবেন দলের ভেতরে ঘাঁপটি মেরে থাকা চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও সুবিধাভোগীরা।

তবে অপর এক সূত্র বলছে, এদেরকে হঠাৎ করে বাদ না দিয়ে কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। নতুন করে এ ধরনের কাউকে পদে রাখা হবে না।

এ ছাড়া দলকে বিভক্ত ও দুর্বল করতে যারা দলের মধ্যে গ্রুপিং ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছেন তাদের ওপরও কড়া দৃষ্টি রাখছেন দলের শীর্ষ নেতারা। তাদের ব্যাপারেও উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

সূত্র মতে, লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমান সব কিছু মনিটর করছেন। তাকে সহযোগিতা করছেন ১০ যুবনেতা। এ প্রক্রিয়ার মধ্যে হাওয়া ভবনের সাবেক কর্মকতারাও আছেন।

সূত্র জানায়, বিএনপির পরবর্তী প্রধান তারেক রহমান দলকে আধুনিক ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে এ সব পদক্ষেপ নিয়েছেন। এতে সমর্থন দিয়েছেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া।

একই সঙ্গে দলটির প্রভাবশালী এই নেতা তৃণমূলেও দলকে সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। মাঠে নামিয়েছেন দলটির সিনিয়র নেতাদের।

এদিকে গত ১৭ জুন থেকে আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সফর করছেন সিনিয়র নেতাদের অনেকেই।

দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দলকে সুসংগঠিত করতে বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। পদ না পাওয়ার হতাশা ও ক্ষোভ রয়েছে যে সব নেতার, তাদের মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। সাংগঠনিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।

এ কারণে ঈদের পরে বিএনপির কাউন্সিলের পর ঢাকা মহানগর ও যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দলসহ বেশ কিছু জেলার কমিটিতেও পরিবর্তন আনবেন দলটির প্রধান খালেদা।

ঈদের পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস-চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব পদেও পরিবর্তন আনা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন নেতা এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

তিনি বলেন, দলে আবার ষড়যন্ত্রকারীদের পদচারণা বাড়ছে। এ থেকে সাবধান থাকতে হবে। এ জন্যই পরীক্ষিত ও বিপদের বন্ধুদের মূল্যায়ন করতে হবে।

সূত্র জানায়, বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার পরে দলটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ মহাসচিবও নিয়োগ করা হবে আগামী কাউন্সিলের মাধ্যমে।

দলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে পূর্ণ মহাসচিব করার চিন্তা রয়েছে বিএনপি নেত্রীর। তবে এ পদের সিদ্ধান্তের বিষয়টি স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ওপর বেশি নির্ভরশীল বলে সূত্র জানায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অধিকাংশ নেতা শুরু থেকেই মির্জা ফখরুল ইসলামকে মেনে নিতে চাইছিলেন না।এ নিয়ে দলের মধ্যে এখনও নানামুখি আলোচনা রয়েছে।

পরিচ্ছন্ন, সৎ ও সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য রাজনীতিক বলেই তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করেন দলটির প্রধান।

আগামী কাউন্সিলে তরিকুল ইসলামকে মহাসচিব করা হবে এমন গুজবও দলে কম নেই। তার পক্ষেও রয়েছে বিএনপির বড় একটি অংশের সমর্থন। যে কারণে এ পদে কাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল।
গুজব রয়েছে, দলের প্রবীণ নেতা মওদুদ আহমদ বা ড. খন্দকার মোশররফ হোসেনকে মহাসচিব করা নিয়েও। এ ব্যাপারে কেউই প্রকাশ্য মুখ খুলতে চাইছেন না।

সূত্র জানায়, বিএনপির মহাসচিব পদটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ভেবে চিন্তেই এ সিদ্ধান্ত নেবেন দলের নেত্রী। প্রয়োজনে আরো কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত হিসেবেই মির্জা ফখরুলকে রাখবেন তিনি।

এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সাদেক হোসেন খোকা, বেগম সেলিমা রহমান স্থায়ী কমিটিতে আসছেন বলেও সূত্র উল্লেখ করেছে।

এ ছাড়া দলের বিশ্বস্ত যুবনেতা রুহুল কবির রিজভীকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
সূত্র জানায়, যুগ্ম মহাসচিব মো. শাজাহানকে সিরিয়ালে ওপরে আনা হবে। একই সঙ্গে যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়োজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদীন ফারুককে দলের যুগ্ম মহাসচিব করা হতে পারে বলেও সূত্র উল্লেখ করেছে।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর ও ব্যারিস্টার আমিনুল হক এবং আমান উল্লাহ আমানকে উপদেষ্টা অথবা ভাইস চেয়ারম্যান করার কথা শোনা যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা খায়রুর কবির খোকন, নাজিমুদ্দিন আলম, হাবিবুর রহমান হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, হাবিব উন নবী সোহেল, নাসিরউদ্দিন পিন্টু, কামরুজ্জামান রতন, সাইফুল আলম নীরব ও মীর নেওয়াজ আলীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৫০ যুবনেতার পদোন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে প্রচার সম্পাদক করা হতে পারে। তবে নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী তার স্বপদেই বহাল থাকবেন।

এ ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এর আগেও কাউন্সিলের দিন তারিখ ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা করতে পারিনি। তবে নতুন কাউন্সিলের দিন তারিখ ঠিক হয়নি। আমরা আলোচনা করে দিন তারিখ ঠিক করার পরেই সাংবাদিকদের জানিয়ে দেওয়া হবে।

দলের নেতাকর্মীদের পদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কাউন্সিলের বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনো তারিখ ঠিক হয়নি। এর আগেও একবার কাউন্সিলের তারিখ ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে মহাসচিবসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও জেলে থাকার কারণে কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। পরে তা স্থগিত করা হয়।

তিনি বলেন, এখন আমরা আলোচনা করে নতুন দিন ঠিক করবো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় হটনিউজকে বলেন, আমি কিছু জানি না। আগে দিন তারিখ ঠিক হোক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদ্য কারামুক্ত বিএনপির এক যুবনেতা বলেন, ঈদের পরপরই কা‌উন্সিল হচ্ছে। তবে মহাসচিবসহ বেশ কিছু পদে পরিবর্তন আসতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক স্থায়ী কমিটির সদস্য হটনিউজকে বলেন, বিএনপির পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন না করা হলে আবার ওয়ান- ইলেভেনের মতো ঘটনা ঘটলে বিএনপির নেতৃত্বে বিপর্যয় ঘটবে।

তিনি আরো বলেন, এবার বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া কাউন্সিলের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন এবং পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করবেন। দলে বেশ কিছু পদে পরিবর্তন আনবেন তিনি।

এদিকে রোববার বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বসিক) নবনির্বাচিত মেয়র আহসান হাবিব কামাল সাক্ষাৎ করতে এলে খালেদা জিয়া বলেছেন, যারা দলের বিপদের সময় পাশে ছিলেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, যারা ত্যাগী, দল পুনর্গঠন করে তাদেরকে নেতৃত্বে আনতে হবে। তার এ বক্তব্যই প্রমাণ করে, খুব শিগগিরই দলের কাউন্সিল করে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাবেন বিএনপি প্রধান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top