সকল মেনু

আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২বিঘা জমির বিক্রির টাকা আত্মসাত

imagesশরীয়তপুর প্রতিনিধি:পৌরসভার আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ১২ বিঘা জমি বিক্রি করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠার কারনে শিক্ষা মন্ত্রনালয় একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রনালযের নির্দেশে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পরিচালনা কমিটির সদস্য সহ এলাকার স্থানী লোকজন এ ঘটনার সঠিক তদন্ত পূর্বক দোষীদের দৃষ্টান্তমূলত শাস্তি দাবী করে বিদ্যালয়ের সম্পত্তি ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছে প্রশাসনের কাছে।

আঙ্গারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের একাংশের সভাপতি আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর শরীয়তপুর জেলা শহরের আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ একর ৭১ শতাংশ (১২ বিঘা) জমি সম্পূর্ন অবৈধভাবে বিক্রি করেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। জমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা থাকলেও কমিটি জমি বিক্রি করে মাত্র দেড় কোটি টাকায়। জমি বিক্রির দেড় কোটি টাকা দীর্ঘ আড়াই মাসেও স্কুল তহবিলে জমা না হওয়ায় এ নিয়ে এলাকায় সৃষ্টি হয় সমালোচনার ঝড়। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র হওয়ায়, এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
স্কুলের সম্পত্তি বিক্রির টাকা আত্মসাত বিষয়ে সম্প্রতি দুটি টেলিভিশন ও একাধিক দৈনিক পত্রিকায় অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশিত হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সংবাদ প্রকাশের পর জমি বিক্রির ২ মাস ২০ দিন পার করে জমি ক্রেতার কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা সমমূল্যের দুটি চেক তরিঘরি করে ব্যাংকে স্কুলের হিসাব নাম্বারে জমা দেন প্রধান শিক্ষক। জমাকৃত চেক দুটি জমি ক্রেতা জে. সরদার কর্পোরেশনের সত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর সরদার কর্তৃক ২ মাস ২০ দিন আগের স্বাক্ষরিত তার ঢাকার ধোলাইপড়স্থ পুবালী ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে অর্থাৎ জমি বিক্রির এক দিন পরে ৩১-১২-২০১২ তারিখের। চেক দুটির নাম্বার হলো (১) ১৩০৮১২০, টাকার পরিমান, ৮০ লক্ষ এবং (২) ১৩০৮১২১, টাকার পরিমান ৭০ লক্ষ।
আঙ্গারিয়া সোনালী ব্যাংক ১৯ মার্চ চেক দুটি সোনালী ব্যাংকের ঢাকাস্থ প্রিন্সিপল অফিসে প্রেরণ করেন। সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপল অফিস ৩১ মার্চ ধোলাইপাড় পূবালী ব্যাংকে টাকা উত্তোলনের জন্য গেলে সেখানে জাহাঙ্গীর সরদারের হিসাব নাম্বারে মাত্র ৮ হাজার ২৫৫ টাকা জমা রয়েছে এবং পুবালী ব্যাংকে সংরক্ষিত জাহাঙ্গীরের স্বাক্ষরে অসংগতি ও গড়মিল রযেছে। ফলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক চেক দুটিকে ১ এপ্রিল অসম্মান (ডিস-অনার) করে ফেরৎ পাঠান।
চেক দুটি পর পর তিন বার ডিস-অনার হবার পরে আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও আঙ্গারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের একাংশের সভাপতি আনোয়ার হোসেন হাওলাদার স্কুলের জমি বিক্রির সমূদয় টাকা টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রনালয় শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তদন্তকাজ পরিচালনা করছে।
আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যারয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও শরীয়তপুর সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি এ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান খান দিপু বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী লোক হওয়ায় তাদের নিজস্ব ঘরোনার লোকের কাছে কারসাজিমূলক ভাবে জমি বিক্রি করে টাকা-জমি দুই’ই আত্মসাৎ করেছে বলে আমরা মনে করছি। আমরা শুধু শিক্ষা মন্ত্রনালয়ই নয় দূর্নীতি দমন কমিশন ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের শাস্তি প্রদান পূর্বক স্কুলের জমি স্কুলের নামে ফেরৎ দেয়ার দাবী জানাচ্ছি।
আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য ও শরীয়তপুর পৌরসভার সাবেক কমিশনার ইউনুছ আলী খান বলেন, আমার বাড়ির সামনেই আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টি। এই বিদ্যালয়টি আমরাই প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আমি প্রায় ৩২ বছর পরিচালনা কমিটির সাথে ছিলাম। তখন স্কুলের অনেক দূর্দিন-দুঃসময় গেছে কিন্তু জমি বিক্রির কোন প্রয়োজন ছিল না। এখন বিদ্যালয়ের সু-সময়, এখন কেন সম্পদ বিক্রি করতে হবে তা আমার জানা নেই। আর ৮ কোটি টাকার জমি দেড় কোটি টাকা বিক্রি করে সে টাকারও কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
আংগারিয়া সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম মাদবর জানান, চেকে জাহাঙ্গীর সরদারের স্বাক্ষর অসংগতিপূর্ন হওয়ায় দোলাইপারস্থ পূবালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেই চেক আমাদের অফিসে ফেরৎ পাঠানোর পর আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যারয়ের প্রধান শিক্ষক ১০ এপ্রিল সেই চেক দুটি প্রথমে ফেরৎ নিয়ে যায়। এর পর আবার তিনি দুই বার চেক জমা দিলে আমরা চেক ফেরত নিয়ে পাঠাই। কারণ পুবালী ব্যাংক অনেক আগেই একই চেক স্বাক্ষরে অসঙ্গতি সহ আরো কয়েকটি কারনে ডি-অনার করেছিল।
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে অবেদনকারী প্রাক্তন ছাত্র আনোয়ার হোসেন বলেন, ৩০ ডিসেম্বর-১২ তারিখে জমি বিক্রির সময় প্রধান শিক্ষক দলিলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন “জমি বিক্রির ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা নগদ বুঝিয়া পাইয়া তফসিল বর্নিত সম্পত্তি বিক্রি করিলাম”। কিন্তু জমি বিক্রর ২ মাস ২০ দিন পরে ব্যাংকে যে চেক জমা দেয়া হয় তাতে উল্লেখিত তারিখ জমি বিক্রির এক দিন পরের। বিদ্যালয়ের ৮ কোটি টাকা মুল্যের জমি তারা দেড় কোটি টাকা মূল্য দেখিয়েও সে টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ জন্য আমি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বরাবরে আবেদন করলে তার একটি তদন্ত কাজ চলছে। আমি আশা করি সঠিক তদন্তে দোষীদের শাস্তি হবে এবং স্কুলের সম্পত্তি স্কুলের নামে ফেরৎ আসবে।
এ বিষয়ে জমি ক্রেতা জাহাঙ্গীর সরদারের কাছে জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে বলেন “ আমি কোন সাংবাদিককে জবাব দিতে বাধ্য নই। এ বিষয়ে কোন কিছু জানার থাকলে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জেনে নেবেন, তারা সব জানে, জবাব দিতে হলে তাদের দেব”।
আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক আনোয়ার কামাল এর কাছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি বিক্রির টাকা কি করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেক ডিস-অনার হয়েছে, এখন পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মতে আইনজীবীর পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আব্দুর রব মুন্সী বলেন, আমি মিডিয়ার কাছে আর কোন কথা বলবো না। আপনাদের যা খুশি লিখেন। তাতে আমার যা হবার হবে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস বলেন, আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি বিক্রি বিষয়ক একটি তদন্তের আদেশ শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে এসেছে। আমরা একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছ্ িতদন্ত শেষে প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রনারয়ে পাঠানো হবে

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top